কোচিং ফি ছাড়া মিলছে না এসএসসির প্রবেশপত্র!

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে কোচিং ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ফলে কোচিং না করেও ফি দিচ্ছে বাধ্য হচ্ছে অনেক পরীক্ষার্থী। এ নিয়ে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কোচিং ফি’র টাকা আদায় নিয়ে আজ রবিবার ৬ এপ্রিল কৃষ্ণকুমারী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের মধ্যে বাক-বিতন্ডা ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোচিং ফি বাবদ প্রত্যেক এসএসসি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে দুই হাজার টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। আর টাকা না দিলে এসএসসি পরীক্ষার্থীদেরকে দেয়া হচ্ছে না প্রবেশপত্র।

ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা গেছে, এসএসসি পরীক্ষার প্রায় তিনমাস আগে থেকে সিটি কর্পোরেশনের স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার্থীদের নিয়ে কোচিং প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের এ কোচিং প্রোগ্রামে অনেক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করলেও অনেকেই নানা প্রতিকূলতায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। কিন্তু বিপত্তি বেঁধেছে এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহের সময়।

দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা কোচিং করুক বা না করুক সব পরীক্ষার্থীর কাছ থেকেই বাধ্যতামূলক আদায় করছে কোচিং ফি। আর ফি না দিলে পরীক্ষার্থীদেরকে প্রবেশপত্র দেয়া হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এমন অভিযোগ শুধু সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত স্কুলের বিরুদ্ধে নয়, নগরীর সেন্ট প্ল্যাসিডস স্কুল এন্ড কলেজ, সেন্ট স্কলাসটিকাস গালর্স স্কুল এন্ড কলেজসহ বেসরকারি অসংখ্য স্কুলে বাধ্যতামূলক কোচিং ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেন্ট প্ল্যাসিডস স্কুল এন্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোচিং ফি বাবদ ৫ হাজার টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। অথচ স্কুলের কোচিংয়ে হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থী নানা কারণে একদিনও ক্লাস করেনি। তাদের কাছ থেকেও ৫ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। টাকা না দিলে প্রবেশপত্র দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন অনেক অভিভাবক।

এসএসসি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, কোচিংয়ে অংশগ্রহণকারীরা কোচিং ফি দেবেন এটা স্বাভাবিক, তবে যারা অংশগ্রহণ করেনি তাদের কাছ থেকেও সমপরিমাণ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অনৈতিক।

এ ব্যাপারে কৃষ্ণকুমারী সিটি কর্পোরেশন স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী ফাতেমা বিনতে শেহেরিন বলেন, পরিবারের অস্বচ্ছলতার জন্য আমরা কোচিং করতে পারিনি। শুধুমাত্র টাকা দিতে হবে তা-ই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কোচিং করিনি। কিন্তু এখন আমাকেও কোচিংয়ের টাকা দিতে হবে-এমন বলা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চসিক কৃষ্ণকুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তামিজ উদ্দিন বলেন, কোচিংয়ের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেন টাকা নেওয়া হবে? এ অভিযোগ ভিত্তিহীন ও অসত্য। আমরা কোচিং নিয়ে কারো কাছ থেকে টাকা নিচ্ছি না। এসব শিক্ষার্থীদেরকে আমরা ক্লাস ফোর থেকে পড়াচ্ছি। আজ তারা এসএসসি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে। এখন কোচিং ফি’র টাকা নিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা নিতান্ত বিব্রতকর।

তিনি আরও বলেন, যারা ভুলক্রমে টাকা দিয়ে দিয়েছে, তাদের টাকা ফেরত দেয়া হবে। ফি’র জন্য প্রবেশপত্র দেয়া হচ্ছে না এটি ভুল, সকল শিক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র প্রদান করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ১টি বিশ্ববিদ্যালয়, ২১টি কলেজ (৭টি স্নাতক ও ১৪টি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের), ৪৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (বালিকা বিদ্যালয় ২৫টি, ৮টি বালক বিদ্যালয়, ১৪টি সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠান), ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭টি কিন্ডারগার্টেন/ পাঠশালা, সাড়ে তিনশত ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, ৪টি নৈশ গণশিক্ষা কেন্দ্র, ৪টি বয়স্ক নৈশ বিদ্যালয়, একটি কম্পিউটার ইনস্টিটিউট, ৬টি কম্পিউটার কলেজ (ক্যাম্পাস), ১টি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করছে।

বিষয়টি নিয়ে চসিক প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, কোচিং প্রোগ্রাম নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কোন ধরণের নির্দেশনা নেই। কেউ যদি কোচিং করান বা কোচিং প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে থাকেন তাহলে সেটি শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের ব্যক্তিগত বিষয়। এখানে যদি কাউকে বাধ্যতামূলক কোচিং করার ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করা হয়। তাহলে সেটি অন্যায় নীতিগর্হিত কাজ। আমাদের কাছে এমন অভিযোগ আসলে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের রসিদ ছাড়া কেউ যাতে টাকা পয়সার লেনদেন না করেন। শিক্ষার্থী বা অভিভাবকরা রসিদ ছাড়া টাকা দেবেন কেন? সবাইকে এ নিয়ে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/জেএইচ 

Scroll to Top