নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্যাসের সংযোগ পেতে আবেদনপত্রসহ প্রয়োজনীয় টাকা পয়সা জমা দিয়েও দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস বঞ্চিত আছেন চট্টগ্রামের প্রায় ২৫ হাজার গ্রাহক। বছরের পর বছর ধরে নানা আশা ভরসার বাণী শুনালেও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) আজ পর্যন্ত আবেদনকারীদেরকে সংযোগ দিতে পারেনি।
এরই মাঝে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ঘোষণা দিয়েছেন নতুন করে আবাসিকে কোন গ্যাসের সংযোগ দেয়া হবে না। উপদেষ্টার এমন বার্তায় এখন ঘুম হারাম হয়ে গেছে আবেদনকারীদের। এ পরিস্থিতিতে কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ কী ভাবছে, গ্যাস যদি না পায় তাহলে গ্রাহকদের টাকার কি হবে? এমন নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।
গত ১৩ জুন জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, নতুন করে আর আবাসিক গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না। গৃহস্থালিতে পাইপলাইনের গ্যাস ব্যবহার করে অপচয় করা হচ্ছে এবং সুযোগ থাকলে ঢাকার সব বাড়িতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিতাম। কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেয়ার সম্ভাবনা নাই। যেসব এলাকায় গ্যাস উত্তোলন করা হয়, সেসব এলাকায় স্বল্পমূল্যে সিলিন্ডার গ্যাস সরবরাহ করার কথা ভাবছে সরকার।
কেজিডিসিএল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে গ্যাসের সংযোগ পেতে প্রায় ২৫ হাজারের মত গ্রাহক আবেদন করেছিলেন। সেসময় তারা গ্যাস প্রাপ্তির ডিমান্ড নোট ও অন্যান্য সব খরচসহ প্রায় ৩০ কোটি টাকা কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের (কেজিডিসিএল) বরাবরে জমা দিয়েছিল। আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে কেজিডিসিএল আবাসিক গ্যাস সংযোগ প্রদান শুরু করেছিল। তবে ২০১৫ সালের শেষে এসে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত দীর্ঘ ১০টি বছর পেরিয়ে গেলেও কোন নতুন সংযোগ পায়নি আবেদনকারীরা।
এমন অবস্থায় শুধু যে আবেদনকারীরা গ্যাসের সংযোগ বঞ্চিত হচ্ছেন তা নয়, কেজিডিসিএল’র ১ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপন প্রকল্পটিও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেছে। কারণ কেজিডিসিএল’র অধীনে প্রায় ৬ লাখ আবাসিক গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৬০ হাজার আবাসিকে প্রিপেইড মিটারে গ্যাস ব্যবহার করে।
এ ব্যাপারে বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা মো. শামসুদ্দিন বলেন, নগরীতে বহুতল ভবন উঠছে। কিন্তু বলতে গেলে প্রায় সবকটি ভবনেই গ্যাস সংযোগ নেই। এসব ভবনগুলো সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করে। আমরা গ্যাসের লাইনের জন্য অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। কেজিডিসিএল ভবন বেশ কয়েকবার ঘেরাও করেছি। কোন কাজ হয়নি। আমাদেরকে সিলিন্ডারই ব্যবহার করতে হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে কেজিডিসিএল’র উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ ও উন্নয়ন) প্রকৌশলী বেলাল উদ্দিন বলেন, গ্যাসের সংযোগের জন্য ডিমান্ড নোট যারা জমা দিয়েছিলেন তাদের অনেকেই টাকা ফেরতের জন্য আবেদন করেছেন। এসব আবেদনকারীদেরকে টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে। আবাসিকে গ্যাসের নতুন সংযোগ প্রদানের ব্যাপারে সরকারের কোন পরিকল্পনা নেই। এখন শুধু শিল্প খাতে গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে ৬ লাখ আবাসিক গ্রাহক, সাড়ে ৩ হাজার বাণিজ্যিক গ্রাহক এবং ৬৮টি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনসহ ২ হাজার ৮০০ শিল্প গ্রাহককে গ্যাসের যোগান দেয় কেজিডিসিএল।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ