কৃষক থেকে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন জিমি কার্টার

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: প্রবল ইচ্ছাশক্তি, অধ্যবসায় আর কঠোর পরিশ্রম থাকলে একজন মানুষ তার জীবনকে বদলে দিতে পারেন। একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে হয়ে উঠতে পারেন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। নিজেকে অধিষ্ঠিত করতে পারেন সর্বোচ্চ পদে। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট সদ্য প্রয়াত জিমি কার্টার এমনই এক ব্যক্তিত্ব। কৃষক পরিবার থেকে উঠে এসে এই জিমি কার্টার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন।

শত বছর বয়সে স্থানীয় সময় রোববার বিকেলে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের প্লেইনসে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন জিমি কার্টার।

জেনে নেয়া যাক এই মহান ব্যক্তিত্বের জীবনী: জর্জিয়ার প্লেইনসে ১৯২৪ সালের ১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন জেমস আর্ল কার্টার জুনিয়র। পরবর্তীতে জেমস শব্দটি সংক্ষিপ্ত হয়ে তিনি জিমি কার্টার নামে পরিচিতি পান। তার পিতা ছিলেন একজন বাদাম চাষী। পারিবারিক সূত্রেই তিনি বাদাম চাষ ও ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত ছিলেন। তারা ছিলেন চার ভাই-বোন।

জিমি কার্টার যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল একাডেমি থেকে ১৯৪৬ সালে স্নাতক পাস করেন। স্নাতক সম্পন্নের পর জিমি পারমাণবিক সাবমেরিন কর্মসূচিতে চাকরি শুরু করেন। পরবর্তীতে এই চাকরি ছেড়ে পরিবারের বাদাম চাষ ও ব্যবসায় জড়িত হয়ে পড়েন।

কিশোর বয়স থেকেই সাউদার্ন ব্যাপ্টিস্ট সানডে স্কুলের শিক্ষক ছিলেন জিমি কার্টার। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনেও শক্তিশালী নৈতিকতার চেতনা নিয়ে আসেন তিনি। উদার নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তিনি নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস প্রকাশ করতেন।

ব্যবসায়ে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও উন্নতির সূত্রে জিমি কার্টার একপর্যায়ে কোটিপতি বনে যান। তাঁর রাজ্য জর্জিয়া থেকে কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জর্জিয়ার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন লাভ করেন। ওই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডকে হারিয়ে জিমি কার্টার যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

প্রেসিডেন্ট কার্টার ১৯৭৭-এর জানুয়ারি থেকে ১৯৮১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী রোনাল্ড রিগ্যানের কাছে পরাজিত হন তিনি।

জিমি কার্টার শাসনকালে ইরানে মার্কিন দূতাবাসে যুক্তরাষ্ট্রের ৫২ জন কূটনীতিক ও নাগরিককে জিম্মি করা হয়েছিল। তিনি ক্ষমতা ছাড়ার পর এই জিম্মি দশার অবসান হয়। অবশ্য ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে কার্টারের ভূমিকা ছিল। এর মধ্য দিয়ে মিসর ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তিচুক্তি সম্ভব হয়।

হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর জিমি কার্টার বিভিন্ন মানবিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত করে রাখেন। মানবাধিকার রক্ষা, দেশে দেশে দারিদ্র্য হ্রাস কর্মসূচি, আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংঘাত নিরসন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ২০০২ সালে তাঁকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।

জিমি কার্টার ছিলেন একজন বহুমুখী প্রতিভা। তিনি একাধারে কৃষক, ব্যবসায়ী, মানবাধিকার কর্মী, সমাজ সংস্কারক ছিলেন। আবার এসবের পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন লেখক।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের স্মৃতিকথা থেকে শুরু করে শিশুসাহিত্য— দুই ডজনেরও বেশি বই লিখেছেন জিমি কার্টার। ধর্মীয় বিশ্বাস ও কূটনীতি নিয়েও তিনি লেখালেখি করেছেন। ২০১৮ সালে তাঁর ‘ফেইথ: আ জার্নি ফর অল’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।

জিমি কার্টারের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে চিপ কার্টার এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমার বাবা একজন নায়ক ছিলেন। শুধু আমার কাছেই নন, যাঁরা শান্তি, মানবাধিকার ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় বিশ্বাস করেন, এমন সবার কাছেই।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি 

Scroll to Top