চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : কুষ্টিয়া শহরের একটি বহুতল ভবনের গ্যারেজে মিলেছে একটি বিলাসবহুল ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো। কালো রঙের এই গাড়ির নম্বর ‘ঢাকা মেট্রো-ঘ ১২-৬০৬০’। এতে এমপি ও সিআইপি স্টিকারসহ মালিকানা কাগজপত্রে নাম পাওয়া গেছে নিহত সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের। স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল সোমবার রাত ১২টার দিকে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গাড়িটি জব্দ করে।
কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের ৮ তলা ভবন সাফিনা টাওয়ারের গ্যারেজে পাওয়া যায় এই গাড়ি। গাড়িটি সেখান থেকে থানায় নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) স্বপন। তিনি বলেন, ‘গাড়ি থেকে আমরা এমপি ও সিআইপি স্টিকারসহ বৈধ কাগজপত্র উদ্ধার করেছি। সবকিছু বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এটি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক এমপি আনারের গাড়ি। আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাড়িটি কয়েক মাস ধরে ভবনের গ্যারেজে রাখা আছে। মাঝেমধ্যে স্টার্ট দেওয়া হলেও বাইরে বের করা হয়নি। স্থানীয়দের ভাষ্য, আগে জানা গিয়েছিল এটি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের গাড়ি। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানালে তারা এসে গাড়ির মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র উদ্ধার করে।
প্রত্যক্ষদর্শী সাব্বির জানান, গাড়ির চালক এক সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগার আলীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এখন তিনি সাফিনা টাওয়ারে ভাড়া নেওয়া জেনুইন লিফ কোম্পানির হয়ে গাড়ি চালান। তার ভাষায়, ‘চালক আজগার আলীর হয়ে গাড়ি চালাতেন, পরে গাড়িটি জেনুইন লিফ কোম্পানির গ্যারেজে রাখা হয়। কাগজপত্রে গাড়ির মালিক এমপি আনার উল্লেখ আছে।’
অন্য প্রত্যক্ষদর্শী জুনায়েদ হোসাইন জানান, ‘খবর পেয়ে গ্যারেজে গিয়ে দেখি দামি গাড়িটি দাঁড়িয়ে আছে। চালক আমাদের দেখে পালানোর চেষ্টা করে এবং ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু তথ্য দিতে অস্বীকার করেন। পরে পুলিশ আসে এবং কাগজপত্র দেখে নিশ্চিত হয় গাড়িটির মালিক সাবেক এমপি আনার।’
ভবনের নিরাপত্তাকর্মী জানান, গাড়িটি কয়েক মাস আগে এনে রাখা হয়। মাঝেমধ্যে চালক শান্ত স্টার্ট দেন। গাড়ির গ্যারেজ ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ভবনে ভাড়া নেওয়া কোম্পানি জেনুইন লিফ। প্রতিষ্ঠানটির সিইও জাহিদ ও জিএম বেলাল বিষয়টি জানেন বলে দাবি চালক শান্তর। শান্ত বলেন, ‘আমি বেলাল স্যার ও জাহিদ স্যারের নির্দেশে গাড়িতে স্টার্ট দিই, মালিক কে জানি না। আমি শুধু নির্দেশ পালন করেছি।’
ভবনের কেয়ারটেকার আলমগীর হোসেন বলেন, জেনুইন লিফ নামে একটি সিগারেট কোম্পানি ভবনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় অবস্থান করছে। বিদেশিরা সেখানে আসেন, থাকেন ও খাওয়া-দাওয়া করেন। গাড়িটি তারাই গ্যারেজে রেখেছেন।
ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমি জানতাম না গাড়িটা কার। আজ শুনছি, এটি এক এমপির গাড়ি।’
গাড়িটির বিষয়ে জানতে চাইলে ভবন মালিক, জেনুইন লিফের সিইও জাহিদ ও জিএম বেলালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। অফিসে কেবল কেয়ারটেকার ও দারোয়ান উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গাড়ির কাগজ অনুযায়ী, মালিক হিসেবে নাম রয়েছে আনোয়ারুল আজীম আনারের। ভবনের তিনটি ফ্ল্যাট ও তিনটি গাড়ির পার্কিং স্পেস ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ভাড়া নিয়েছেন মেহেরপুর জেলার গাংনী পৌরসভার বাঁশবাড়িয়া দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা মো. মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি কুষ্টিয়ার দশ মাইল এলাকায় অবস্থিত ‘তারা টোবাকো’ কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১২ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান ঝিনাইদহ-৪ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। ১৬ মে থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। ২২ মে জানানো হয়, তাকে হত্যা করা হয়েছে। ভারতীয় পুলিশ জানায়, তাকে টুকরো করে হত্যা করে মরদেহ বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেওয়া হয়। তবে এখনও তার দেহাবশেষ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ