সিপ্লাস ডেস্ক: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছদ্মনামে পেজ খুলে কুয়েতের ভিসা ও বিএমইটি কার্ড জালিয়াতি চক্রের তিন সদস্যের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন─ মো. শরিফুল ইসলাম, আবরার জাওয়ার তন্ময় ওরফে রেজাউল করিম রেজা ওরফে হৃদি মাহাজাবিন এবং আহিয়ান শিশির ওরফে কামরুজ্জামান শিশির।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) আসামিদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদেরকে সাতদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক রহিদুল ইসলাম। অপরদিকে রিমান্ড বাতিল ও আসামিদের জামিন চেয়ে আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান আসামির জামিন নামঞ্জুর করে তিনদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।
শুক্রবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও ঢাকার ভাটারা এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে ডিবি-ওয়ারী বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম। এসময় তাদের কাছ থেকে ৪০টি পাসপোর্ট, ৯টি জাল ভিসা, জাল বিএমইটি কার্ডের ফটোকপিসহ প্রতারণায় ব্যবহৃত মোবাইল ও সিম উদ্ধার করা হয়।
মামলার সূত্রে জানা যায়, একটি প্রতারক চক্র বিদেশে লোক পাঠানোর জন্য গুলশান-১ এ আল সাফার ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি অফিস নেয়। সেই অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করে ফেসবুকে বিভিন্ন ছদ্মনাম দিয়ে পেজ খোলে। সেখানে কুয়েতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কেউ বিদেশ যেতে ইচ্ছুক হলে তারা তার সাথে একটা চুক্তি করে। পরে এই প্রতারক চক্র আরবিতে লেখা বিভিন্ন ব্যক্তির কুয়েতের সঠিক ভিসা কপি সংগ্রহ করে। ভিসা নম্বর ঠিক রেখে ফটোশপের মাধ্যমে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তির নাম, পাসপোর্ট নম্বরসহ অন্যান্য তথ্য সংযুক্ত করে কুয়েতের জাল ভিসা তৈরি করে। জাল ভিসা, পাসপোর্টের ফটোকপি নিয়ে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা বিভিন্ন টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার থেকে তিন দিনের ট্রেনিং সম্পন্ন করে সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন। পরে জাল ভিসা, পাসপোর্ট এবং ট্রেনিংয়ের সার্টিফিকেট নিয়ে একজন বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তি জনশক্তি ব্যুরোর প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন জেলার কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে অবস্থিত ফিঙ্গার প্রিন্ট অফিসে ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার জন্য যায়।
এছাড়া আসামিরা একটি সঠিক বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স কার্ডের স্ক্যানকপিতে বিদেশগামী ব্যক্তির নাম-ঠিকানা লিখে তা রঙ্গিন কপি প্রিন্ট করে। সেটা দেখিয়ে বিএমইটি কার্ডও কমপ্লিট হয়েছে বলে জানায় বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের। এরপর বিমানের টিকিট দেখিয়ে তাদের নিকট থেকে চুক্তির পুরো টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায়। এভাবে চক্রটি অর্ধশতাধিক মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রতারণার স্বীকার একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৭ আগস্ট গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি তদন্তে প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারকদের শনাক্ত করে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও ঢাকার ভাটারা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।