চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : পার্বত্য চট্টগ্রামের নিষিদ্ধ ঘোষিত সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ইউনিফর্ম তৈরির সূত্রে গ্রেফতার আওয়ামী লীগ নেতার ভাইসহ আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার (১৮ জুন) নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানা পুলিশের করা ১০দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মোস্তফা এ আদেশ দেন। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রিমান্ডে নেওয়া আট আসামি হলেন- তারিকুল ইসলাম, তৌহিদুল ইসলাম, আতিকুর রহমান, জামালুল ইসলাম, কামরুজ্জামান, সাহেদুল ইসলাম, গোলাম আজম ও নিয়াজ মোরশেদ। এদের মধ্যে তারিকুল ইসলাম চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. আবদুচ ছালামের ছোট ভাই।
এর আগে, গত ৩ জুন তারিকুল ইসলাম, তৌহিদুল ইসলাম, আতিকুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রথম দফায় পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত।
গত ১৭ মে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়ারহাট এলাকার রিংভো অ্যাপারেলস নামে একটি পোশাক কারখানা থেকে ২০ হাজার ৩০০টি কেএনএফ’র ইউনিফর্ম জব্দ করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে।
এরা হলেন- সাহেদুল ইসলাম, গোলাম আজম ও নিয়াজ মোরশেদ। এদের মধ্যে সাহেদুল ইসলাম কারখানার মালিক। অপর দু’জন ইউনিফর্মগুলো তৈরির অর্ডার এনেছিলেন।
এরপর ২৬ মে রাতে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার নয়াহাট এলাকায় একটি গুদাম থেকে ১১ হাজার ৭৮৫ পিস ইউনিফর্ম জব্দ করে পুলিশ। দুইদিন পর ২৮ মে রাতে নগরীর পাহাড়তলী থানার ডিটি রোডের একটি পোশাক কারখানা থেকে আরও প্রায় ১৫ হাজার ইউনিফর্ম জব্দ করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় কারখানার মালিক কামরুজ্জামানকে।
২ জুন রাতে নগরীর কালুরঘাটে ‘ওয়েল কমপোজিট নিট কেমিক্যাল ফেব্রিকস ডাইং’ নামের কারখানায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরা হলেন- তারিকুল ইসলাম, তৌহিদুল ইসলাম, আতিকুর রহমান ও জামালুল ইসলাম। তাদের বায়েজিদ বোস্তামি থানার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পুলিশের ভাষ্যমতে, ওয়েল কমপোজিট থেকে কুকি-চিনের ইউনিফর্ম তৈরির সূতা ও কাপড় সরবরাহের অভিযোগ পেয়ে ওই কারখানায় অভিযান চালানো হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ওয়েল কমপোজিট নিট কেমিক্যাল ফেব্রিকস ডাইংয়ের মালিক প্রতিষ্ঠান ওয়েল গ্রুপ। এটি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মো. আবদুচ ছালামের পারিবারিক মালিকানায় থাকা শিল্পগোষ্ঠী। ছালাম ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন।
এ ঘটনায় নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেন নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, দুই কোটি টাকার চুক্তিতে ইউনিফর্মগুলো তৈরির অর্ডার নেওয়া হয়েছিল। গত মার্চে এ অর্ডার কারখানায় এনেছিলেন গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। তারা মংহলাসিন মারমা ওরফে মং নামে একজনের কাছ থেকে দুই কোটি টাকার চুক্তিতে ইউনিফর্মগুলো তৈরির অর্ডার নেন। মে মাসে সেগুলো তাদের সরবরাহের কথা ছিল।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, কুকি-চিন (কেএনএফ) পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান জেলার একটি নিষিদ্ধ সশস্ত্র জঙ্গি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন। এর সদস্যরা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান জেলার বিভিন্ন থানার এলাকায় সশস্ত্র অবস্থায় অবস্থান করে। বিভিন্ন মানুষজনের কাছ থেকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়, হত্যা, অপহরণ, গুমসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে।
গ্রেফতার ও অজ্ঞাতনামা আসামিরা পরস্পর অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও যোগসাজসে বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করার প্রচেষ্টায় ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে রাষ্ট্রের সম্পত্তি বিনষ্ট, জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে রাষ্ট্রের স্বাভাবিক কাজ থেকে বিরত থাকিতে বাধ্য করে, সন্ত্রাসী কার্য সংগঠিত করে অবৈধভাবে বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ