নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামীকাল শনিবার (৯ মার্চ) তৈরি পোশাক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নির্বাচন। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিজিএমইএ এর উত্তরার নিজস্ব কার্যালয়ে চলবে ভোটগ্রহণ। তবে এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভুয়া ভোটার নিয়ে তোলপাড় চলছেই। যদিও আপত্তির কারণে ৬৭ জন ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখনো রয়ে গেছে ৩৬২ অবৈধ ভোটার। বিষয়টি পুরোপুরি সুরাহা না করে নির্বাচন করায় উত্তাল বিজিএমইএ’র ভোটের মাঠ।
জানা গেছে, সরকারের অগ্রাধিকারমূলক খাতের সুযোগ নিয়ে বিপুলসংখ্যক গার্মেন্টস-কারখানা অনৈতিকভাবে নানা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছে। বিজিএমইএ নির্বাচনেও এরা ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতেও সক্ষম হয়েছে।
বিজিএমইএ বলছে, নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভোটার হতে হলে তাদের প্রতিষ্ঠানের টিআইএন নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক। সরকারের সুযোগ-সুবিধা পেতে হলেও প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। গত ১৮ জানুয়ারি বিজিএমইএর নির্বাচন বোর্ড প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে। খসড়া তালিকায় ঢাকার ২০৩২টি এবং চট্টগ্রামের ৪৬৪টি প্রতিষ্ঠান স্থান পেয়েছে। এতে কিছু ভোটার তাদের সকল শর্ত পূরণ করেছে কি না, এ নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়। এইসব ভোটারদের তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে তল্লাশি করে দেখা যায়, ভোটার তালিকায় রয়েছে এমন ৪২৯টি প্রতিষ্ঠানের আয়কর প্রদানসংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। একটি পক্ষ গত ৩১ ডিসেম্বর এইসব প্রতিষ্ঠানের ভোটার হওয়ার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে এফবিসিসিআই আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে। এর মধ্যে ৬৭টি কারখানার নাম বাদ দিয়েছে নির্বাচনী আপিল বোর্ড। বাকিদের বিষয়ে এখনো শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালের মহাসচিবের কাছে একটি তাগাদাপত্র দেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী অভিযোগের পর সাতদিনের মধ্যে শুনানি হওয়ার কথা। একমাসেও শুনানি না হওয়ায় এ বিষয়ে আদৌ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অথচ ৯ মার্চ নির্ধারিত সময় অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বিজিএমইএর কয়েজন নেতা বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, নামসর্বস্ব কিছু পোশাক কারখানা মালিকের জন্য পুরো খাতের বদনাম হচ্ছে। তারা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে নানা ধরনের জাল-জালিয়াতিতে জড়িত হয়ে পড়েছে। অনেক সময় বিজিএমইএ এসব প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ইউজার্স ডিক্লারেশনের কাগজপত্রসহ নানা ডুকুমেন্ট সরবরাহ করে। এগুলো নিয়ে তারা নিজেদেরকে বিজিএমইএ সদস্য পরিচয় দিয়ে সরকারের কাছ থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো টিআইএন নম্বর বা ট্যাক্স ফাইলই নেই। এইসব অনিয়ম এতদিন আড়ালেই থেকে গেছে। নির্বাচন সামনে রেখে বের হয়েছে এই অনিয়ম। এসব অনিয়ম অমিমাংসিত রেখে নির্বাচন হলে তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
এ বিষয়ে নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ফয়সাল সামাদ বলেছেন, বিজিএমইএতে ভুয়া সদস্য তৈরি করা হয়েছে, যাদের বৈধ ব্যবসা নেই। কোভিড, রাশিয়া ইউক্রেইন যুদ্ধসহ নানা কারণে গত দুই-তিন বছরে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ এরই মধ্যে আরও ৪ শতাধিক ব্যক্তিকে বিজিএমইএর সদস্য করা হয়েছে। আমরা মনে করি নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য বর্তমান পর্ষদ নিজেদের লোকদের বেআইনিভাবে এখানে সদস্য করেছে।
এদিকে ৬ মার্চ চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয় ফোরামের পরিচিতি ও মতবিনিময় সভা। এতে ভুয়া ভোটারের প্রসঙ্গ ওঠতেই বিব্রতবোধ করেন ফোরামের নেতারা। বিজিএমইএ’র মত একটি বৃহৎ ব্যবসায়ী সংগঠনে এ ধরণের প্রশ্ন উঠা শুভ নয় বলে মত দেন তারা।
এ বিষয়ে এশিয়ান গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম এ সালাম চাটগাঁ নিউজকে বলেন, চালে ধান বেশি থাকলে সবার চোখে পড়বেই। আমাদের বিজিএমইএতে মানুষ তো বেশি নয়, ১৬ থেকে ১৭শ।’ এর মধ্যে যদি তিন-চারশ ভোটার নিয়ে কমপ্লেইন থাকে, তাহলে তো ভালো কিছু হলো না। আমরা যদি আমাদের বিষয়টা না বুঝি তাহলে কেমন হয়?
নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দিতায় অংশ নিচ্ছে ‘ফোরাম’ ও ‘সম্মিলিত পরিষদ’ নামে দুটি প্যানেল। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩৫টি পরিচালক পদে প্যানেল দুইটি থেকে লড়ছেন ৭৯ জন প্রার্থী। ফোরাম প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফয়সাল সামাদ। আর সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্বে আছেন এস এম মান্নান কচি। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলিয়ে এবার মোট ভোটার প্রায় আড়াই হাজার। এবারের ভোটের লড়াইয়ে নামাদের মধ্যে বড় সংখ্যক তরুণ উদ্যোক্তা।
গত ১৯ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিজিএমইএ’র দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনের (২০২৪-২৫) আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ইতিমধ্যে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে, মোট ভোটার সংখ্যা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪৯৬ জন। তফসিল অনুযায়ী, ৯ মার্চ ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য ফেব্রুয়ারির ৩রা তারিখের মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল, ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহারের তারিখ ছিল।
উল্লেখ্য, ৪২৯টি ভুয়া তৈরি পোশাক কারখানার অস্তিত্ব নিয়ে সম্প্রতি গণমধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। ইতিমধ্যে ৬৭টি কারখানার নাম ওই নির্বাচনের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে নির্বাচনী আপিল বোর্ড। তবে বাকি কারখানাগুলোর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন দিয়েছে একটি পক্ষ। এফবিসিসিআই আরবিট্রশেন ট্রাইব্যুনালে গত ৩১ জানুয়ারি ভুয়া ভোটারের বিষয়ে আবেদন দেওয়া হলেও এখনো পর্যন্ত তা শুনানির জন্য আসেনি। এ বিষয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালের মহাসচিব বরাবর একটি তাগাদাপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ দেওয়ার পরও এ বিষয়ে কোন শুনানি হয়নি। এমনকি এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা আদৌ নেওয়া হবে কি না সে বিষয়েও অভিযোগকারীকে কিছু জানানো হয়নি।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ