কাপ্তাইয়ে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বাড়লেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে

কাপ্তাই প্রতিনিধি: হঠাৎ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য জায়গার মতো কাপ্তাই উপজেলায় এই বছর ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। গত জুন মাসে উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নে শতাধিক ম্যালেরিয়া রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশ কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে।

এছাড়া চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতাল এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে সকলেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। চলতি জুলাই মাসের ৯ জুলাই পর্যন্ত আরোও ৩১ জন ম্যালেরিয়া রোগী সনাক্ত হয়েছে। যারা ঐসব হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: রুইহ্লা অং মারমা তাঁর দপ্তরে জানান, বিশেষ করে উপজেলার ৪নং কাপ্তাই ইউনিয়ন এর দূর্গম হরিনছড়া, ভাঙামুড়া, পাংখোয়া পাড়া, বিলি পাড়া এবং চিৎমরম ইউনিয়ন এর দূর্গম আড়াছড়ি এলাকায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুভার্ব বেশী হচ্ছে।

গতবছর এর তুলনায় এই বছর ম্যালেরিয়ার সনাক্তের হার বেশী হচ্ছে। গত বছরের জুন মাসে যেখানে গড়ে ৭ জন ম্যালেরিয়া রোগী এবং সারা বছরে ১শত ৫ জন রোগীর ম্যালেরিয়া সনাক্ত হলেও এই বছর শুধুমাত্র জুন মাসে হাসপাতালের বেডে ৩১ জন রোগী ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্ষা শুরু হবার পর বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক নারী ও পুরুষ ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা জানান।

তিনি আরোও জানান, সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক মিলে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করায় ম্যালেরিয়ায় এই উপজেলায় এখনো কোন রোগী মৃত্যুবরণ করেনি। এই বিষয়ে জনগণকে আরোও বেশী সচেতন হতে হবে, মশারী ব্যবহার করতে হবে এবং জ্বর হলেই ম্যালেরিয়া পরীক্ষা করাতে হবে। এছাড়া পার্বত্যঞ্চলে ভ্রমনকারী সকলকে ফিরে যাবার পর জ্বর হলে অবশ্যই ম্যালেরিয়া পরীক্ষা করতে হবে।

এদিকে হাসপাতালে কর্মরত নার্সিং সুপারভাইজার প্রমিলা বিশ্বাস বলেন, আজকে (১০ জুলাই) পর্যন্ত ৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং গত জুন মাসে ৩১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে।

এসময় কথা হয় ম্যালেরিয়ার রোগী কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা ইউনিয়ন এর দেবতাছড়ি হতে আসা জ্যোতিকা চাকমার সাথে। তিনি বলেন, আমার জ্বর হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। পরীক্ষার পর আমার ম্যালেরিয়া ধরা পড়ে। এখানে ভালো মতো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছি ।

এদিকে পার্বত্যঞ্চলের স্বাস্থ্য সেবার বাতিঘর চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডা: প্রবীর খিয়াং বলেন, ম্যালেরিয়া হচ্ছে একটি মশা বাহিত রোগ যা অ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এটি হচ্ছে প্লাজমোডিয়াম নামে একটি পরজীবী রয়েছে যার কারণে এটি হতে পারে। যখন জ্বর হয় তখন সাধারণত মাথা ব্যাথা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর অবসাদ হয়। যদিও বর্তমান সময় এখন আরো নানারকম উপসর্গ দেখা দিচ্ছে এখন দেখা যাচ্ছে ডায়রিয়া হওয়া রোগীর ক্ষেত্রেও তারা ম্যালেরিয়া আক্রান্ত।

ব্রাক স্বাস্থ্য কর্মসূচী কাপ্তাই উপজেলার সিনিয়র প্রোগাম অফিসার শম্পা দাশ গুপ্তা বলেন, হঠাৎ করে কাপ্তাইয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগকে সাথে নিয়ে আমরা এসব এলাকায় উঠান বৈঠক করছি। এছাড়া আক্রান্ত রোগীদের রক্ত পরীক্ষা, চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং মশারী বিতরণ করছি।

এদিকে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে জনসচেতনতায় কাপ্তাই তথ্য অফিসের উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে বলে জানান কাপ্তাই সহকারী তথ্য অফিসার দেলোয়ার হোসেন।

চাটগাঁ নিউজ/ঝুলন/এমকেএন

Scroll to Top