কলকাতায় তাজিয়া মিছিলে দেখা মিলল যুবলীগ নেতা বাবরকে

নিজস্ব প্রতিবেদক: পবিত্র আশুরা উপলক্ষে কলকাতায় অনুষ্ঠিত তাজিয়া মিছিলে আচমকা দেখা মিলেছে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির উপঅর্থ সম্পাদক চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের। ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই নেতা আত্মগোপনে চলে যান। এরপর থেকে তিনি কি দেশের ভিতর আত্মগোপনে? নাকি বিদেশে পালিয়ে গেছেন?- তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনসহ রাজনৈতিক মহলে ধোঁয়াশা ছিল।

তবে আজ রবিবার পবিত্র আশুরার দিনে কলকাতা বারাসাত এলাকার কাজী পাড়ায় অনুষ্ঠিত তাজিয়া মিছিলে শরীক হয়ে আনন্দ উপভোগ করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভিডিওর পর এই নেতার অবস্থান সম্পর্কে এখন স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেছে- তিনি ভারতের কলকাতাতেই আশ্রয় নিয়েছেন।

জানা যায়, হেলাল আকবর চৌধুরীর বিরুদ্ধে সিআরবি জোড়া খুন মামলাসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর হামলা ও হত্যার দায়ে কোতোয়ালি, চান্দগাঁও এবং পাঁচলাইশ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। সর্বশেষ গত ১ জুলাই কোতোয়ালি থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলায়ও তিনি এজাহারভুক্ত আসামি। গতবছর ৪ আগষ্ট নিউমার্কেট এলাকায় ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কাউসার নামে এক ছাত্র। এ ঘটনায় তার বাবা মোতালেব বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন।

তবে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই মুরাদপুরে আন্দোলনরত ছাত্রদের উপর যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলা, গুলি ও হত্যার ঘটনায় হেলাল আকবর চৌধুরীর বিরুদ্ধে তথ্যভিত্তিক প্রমাণ আলোচিত একটি ঘটনা। সেদিন অস্ত্র হাতে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে হামলা ও হত্যায় নেতৃত্বদানের একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছিল। ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত ভিডিওটি নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মুরাদপুরে আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে ছাত্রদের ধাওয়া খেয়ে মুরাদপুরস্থ একটি রেস্টুরেন্টের সামনে অবস্থান করছিলেন তারা। সেখান থেকে ছাত্রদের সাথে তাদের পাথর ছোঁড়াছুঁড়ি চলছিল। পরে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে হামলায় যোগ দেন হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর। সে সময় তার ডান হাতে ছিল পিস্তল এবং মাথায় হেলমেট। তার ডান পাশে টি-শার্ট পরে হেলমেট মাথায় দাঁড়িয়ে ছিলেন নগর ছাত্রীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি। বাবরকে অস্ত্র হাতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিতে দেখা যায়।

অবশ্য ৫ আগষ্ট পরবর্তী এ হামলা ও হত্যার ঘটনায় বাবরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রামে হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের নেতৃত্বে একটি ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ বাহিনীর মাধ্যমে তিনি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে টেন্ডারবাজি, চট্টগ্রাম নগরের সিআরবি, এনায়েতবাজার, নন্দনকাননসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় জমি দখলসহ নানা অপকর্ম পরিচালনা করতেন। তিনি চট্টল বীর আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী কর্মী। পরবর্তীতে তিনি সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহীবুল হাসান চৌধুরী বলয়ভুক্ত রাজনীতি করতেন।

জানা যায়, হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর ১৯৮৮ সালে নন্দনকানন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে এনায়েত বাজার ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯৭ সালে ওমরগণি এম.ই.এস. কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য, পরে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য পদ পান। ২০১৩ সালে যুবলীগের কেন্দ্রীয় উপ অর্থ সম্পাদক মনোনীত হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর চট্টগ্রাম-১১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নও চেয়েছিলেন। তবে দলের পক্ষ থেকে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ

Scroll to Top