উজ্জ্বল দত্ত : অসহনীয় যানজটের অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু। শম্বুক গতির টোল আদায়ের কারণে সেতুর টোল প্লাজায় লেগে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট। এতে করে কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, ভোগান্তি বাড়ছে যাত্রী সাধারণের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বান্দরবান, কক্সবাজারসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৭টি উপজেলার মানুষ শাহ আমানত সেতু ব্যবহার করে। স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক গড়ে ১৪-১৫ হাজার যানবাহন কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু পারাপার হলেও পর্যটন মৌসুম ও ঈদের সময় প্রায় দ্বিগুন যানবাহন চলাচল করে এ সেতুতে। তবে সেতুর টোল প্লাজা পার হতে গিয়ে একটি গাড়িকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এতে করে গাড়িতে থাকা যাত্রী সাধারণকেও আটকে থাকতে হচ্ছে ভয়াবহ যানজটে। টোল পরিশোধে অপেক্ষমাণ গাড়ির সারি মাইল পেরিয়ে যাচ্ছে প্রায় সময়।
স্থানীয়রা জানান, সেতুর পূর্বপ্রান্তের টোলপ্লাজা থেকে শুরু হওয়া গাড়ির জট দেড় মাইল দূরত্বের মইজ্যার টেক পেরিয়ে কলেজ বাজার রোড এলাকা পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে। শাহ আমানত সেতু পার হতে গিয়ে যানজটের এ হাল নিত্যদিনের।
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটের একটি চেয়ারকোচে করে আমিরাবাদ লোহাগাড়া থেকে চট্টগ্রাম নগরে আসছিলেন কলাউজানের যাত্রী মো. আশফাক। ওই গাড়িতেই চাটগাঁ নিউজের প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় নানা বিষয়ে।
তিনি বলেন, আমিরাবাদ থেকে পৌনে দুই ঘণ্টায় মইজ্যার টেক পৌঁছেছি। আর মইজ্যার টেক থেকে ব্রিজে আসতে সময় লেগেছে প্রায় সোয়া একঘণ্টা। টোল নিতে গিয়ে আদায়কারীরা দেরি করে ফেলে। প্রত্যেকটি গাড়ি থেকে টোল আদায়ের সময় বেরিকেড ফেলা হচ্ছে। টোল আদায় হলে তারপর বেরিকেড তুলে গাড়িটিকে যেতে দেয়া হচ্ছে। এতে সময় নষ্ট হচ্ছে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী একটি গণপরিবহনের সুপারভাইজার মো. জয়নাল বলেন, অধিকাংশ গাড়ি চালকদের একটি বদভ্যাস আছে। তারা টাকা ভাঙতি করার জন্য হয়তো পেট্রোল পাম্প নয়তো ব্রিজের টোল প্লাজাকে বেছে নেন। অর্থাৎ অধিকাংশ ড্রাইভাররা টোলে এসে ১০০, ২০০, ৫০০ কিংবা হাজার টাকার নোট ধরিয়ে দেয়। আর এ টাকা ভাঙতি দিতে গিয়ে আদায়কারীদের সময় ক্ষেপণ হয়। তাছাড়া টোলবক্সে টোকেন বা স্লিপ কাটা, ব্যারিকেড উঠানো-নামানো করতে কিছু সময় লাগে। একটি গাড়ির টোল কাটতে যদি দুই মিনিটও লাগে তাহলে ১০টি গাড়ির জন্য লাগছে ২০ মিনিট। আর এ ২০ মিনিটে রানিং গাড়ি জমে যাচ্ছে কমপক্ষে ৫০-৬০টি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ চট্টগ্রাম সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে বর্তমানে যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। দৈনিক গড়ে ২৫ হাজার যানবাহন সেতু ব্যবহার করছে। টোল পোস্ট অতিক্রম করছে। এখন অটোমেশনে টোলের টাকা নেয়া হলেও টোল পোস্টে পুরো যানবাহনের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করে টোল পোস্ট পার হতে প্রতিটি গাড়ির ক্ষেত্রে ২ মিনিট সময় ব্যয় করতে হয়।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চট্টগ্রামের নির্বাহি প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন চাটগাঁ নিউজকে বলেন, ঈদ যাত্রাকে কেন্দ্র করে টোল বক্সে জনবল বাড়ানো হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে ১০-১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করলেও চলতি সিজনে গাড়ি চলছে দৈনিক প্রায় ২৫-২৬ হাজার। গণপরিবহনের থেকে প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি। একদিকে পর্যটন সিজন অন্যদিকে ঈদ। তাই গাড়ি বেড়ে গেছে। লেইন তো আর বাড়েনি। এতে করে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তবে জনবল বাড়ানোর কারণে এবার যানজট অনেকাংশে কমেছে।
এদিকে, শাহ আমানত সেতুর টোল আদায়ে ধীরগতি, টোল বক্সে স্বল্প জনবল; সেতু পার হতে গিয়ে অসহনীয় যানজটে ক্ষুব্ধ যাত্রী সাধারণ স্যোসাল মিডিয়াতেও সমালোচনার ঝড় তুলেছে। স্যোসাল এক্টিভিস্টরা এ নিয়ে ব্যক্তিগত প্রোফাইলে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছেন।
নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন দুই টোল লেন
চট্টগ্রামে শাহ আমানত সেতুতে (তৃতীয় কর্ণফুলী) জট কমাতে আরও দুটি টোল লেন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। ইতোমধ্যে মইজ্জ্যারটেক এলাকা থেকে টোল সড়ক বর্ধিতকরণের কাজ শুরু করেছে সওজ। নতুন দুটি টোল লেন হলে ১০টিতে দাঁড়াবে টোল বুথ। বর্তমানে আসা-যাওয়ায় চারটি করে মোট আটটি বুথে টোল আদায় করা হয়। নতুন টোল লেন দুটি নির্মাণ শেষে ব্যবহার শুরু হলে টোল প্লাজা যানজটমুক্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলীরা।
জানা যায়, ২০১০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর শাহ আমানত সেতু চালু হয়। প্রথমে টোল প্লাজায় তিনটি করে উভয় দিকে ছয়টি লেন নিয়ে সেতুর টোল আদায় কার্যক্রম চালু হয়। সেতুর ওপর যানবাহনের চাপ অত্যধিক হওয়ার কারণে তিন বছর আগে টোল প্লাজার দুই পাশের অযান্ত্রিক যান চলাচলের জন্য রাখা ফ্রি টোল লেন দুটির পরিসর বাড়িয়ে ছোট যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে টোল বুথ করা হয়। এরপর থেকে দুপাশে চারটি করে আটটি টোল বুথ রয়েছে। তারপরও প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের কারণে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ