কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের অভিযানে ৬০ হেক্টর বনভূমি উদ্ধার

উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি: কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ বনদস্যুতা ও অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালিয়ে প্রায় ৬০ হেক্টর সামাজিক বনভূমি দখলমুক্ত করেছে।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে কক্সবাজারের রামু উপজেলার ধোয়াপালং রেঞ্জের আওতাধীন খুনিয়াপালং ইউনিয়নের বসুরঘোনা এলাকার দ্বিতীয় আবর্তে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উক্ত সামাজিক বনায়ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ দখলচক্র অবৈধভাবে ২৫টি পানের বরজ গড়ে তোলে। সম্প্রতি তারা নতুন করে আরও পাঁচটি স্থানে পানের বরজ তৈরির অপচেষ্টা চালায়। একই সঙ্গে বনজঙ্গল কর্তন করে প্রায় দুই একর জমিতে ঢেঁড়সসহ বিভিন্ন মৌসুমি সবজি চাষের মাধ্যমে বনভূমি দখলের চেষ্টা করা হচ্ছিল।

সূত্র জানায়, অতীতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি পলাতক দস্যুবাহিনীর সর্দার ও তার সহযোগীরা এলাকায় বনবিভাগের নিয়মিত কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে আসছিল। ফলে দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষিত এই বনভূমি অবৈধ দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এ অভিযানে ২৫টি পানের বরজ, দুই হাজারেরও বেশি সুপারি চারা এবং অবৈধভাবে স্থাপিত সবজি ক্ষেত সম্পূর্ণভাবে অপসারণ করা হয়। এর মাধ্যমে প্রায় ৬০.০ হেক্টর সামাজিক বনায়নভূমি সম্পূর্ণরূপে দখলমুক্ত করা সম্ভব হয়।

বনবিভাগ জানায়, উদ্ধারকৃত বনভূমিটি দীর্ঘদিন ধরে এশিয়ান হাতির নিরাপদ আবাসস্থল ও বিচরণ ক্ষেত হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রতিবছর এই এলাকায় হাতির বাচ্চা জন্ম নেয়, যা এলাকার পরিবেশগত গুরুত্বের স্পষ্ট প্রমাণ। অভিযানের পর এলাকাটিতে উপযোগী প্রজাতির গাছ রোপণের মাধ্যমে পুনরায় বনায়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী এই উচ্ছেদ অভিযানটি দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। অভিযানে সহকারী বন সংরক্ষক, রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), বন বিভাগের বিভিন্ন রেঞ্জ ও বিট কর্মকর্তা (বিকাশ দাশসহ), বনকর্মী, পুলিশ সদস্য এবং সিপিজি সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।

কক্সবাজার লিংক রোড স্টেশন অফিসার বিকাশ দাশ অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি আরো বলেন, সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

পানেরছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শরীফুল আলম বলেন, সামাজিক বনায়নের এই বিশাল এলাকা দখলমুক্ত করা আমাদের জন্য একটি বড় সাফল্য। দখলদাররা বনজঙ্গল ধ্বংস করে চাষাবাদ চালিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছিল। এখন পরিকল্পিত বনায়নের মাধ্যমে এলাকাটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উদ্ধারকৃত এই বনভূমি এশিয়ান হাতির একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল। এখানে নিয়মিত ২০ থেকে ২৫টি হাতির চলাচল ও খাদ্য আহরণ করে থাকে। তিনি আরো বলেন, বনদস্যুতার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং হাতির নিরাপদ আবাসস্থল সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চাটগাঁ নিউজ/ইব্রাহিম/এমকেএন

Scroll to Top