নিজস্ব প্রতিবেদক: পর্যটকদের সাথে কক্সবাজারে ভ্রাম্যমাণ মাছের দোকান গুলোতে অত্যন্ত চড়া দামে পঁচা মাছ বিক্রি করে প্রতারণার অভিযোগ নতুন নয়। তবে এবার পর্যটকদের সাথে অভিনব প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। মাছ পছন্দ ও দরদাম করে কেনার পর অভিনব কৌশলে পাল্টে ফেলা হচ্ছে সে মাছ। কোন পর্যটক তাজা এবং বড় সাইজের মাছ কিনে দিলেও তাকে কৌশলে গছিয়ে দেওয়া হয় ভিন্ন জাতের কোন পঁচা মাছ অথবা কমদামি ছোট আকারের মাছ।
গত রোববার (১০ ডিসেম্বর) কক্সবাজারের লাবণি পয়েন্টে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। যেখানে ফেসবুকে এই অভিযোগ করেন দুই পর্যটক।
জানা যায়, দুইজন পর্যটক জনৈক রবিউল নামের ক্রেতার কাছ থেকে ১৪০০ টাকায় ১টি তাজা রেড স্ন্যাপার মাছ কিনেন। মাছটি কাটার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় অন্ধকার কোণে। মাছটি কাটার পর দেখা যায় পর্যটকের কিনে দেওয়া মাছের পরিবর্তে তাকে দেয়া হয় ভিন্ন জাতের কমদামি একটি মাছ।
পর্যটকের পছন্দ করা মাছের কানকো কাঁটা থাকায় সহজেই তা চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন ওই পর্যটক। সন্দেহ হওয়ায় উক্ত পর্যটক এক প্রকার জোর করেই মাছ কাটার জায়গায় গিয়ে ঘিরে রাখা প্লাস্টিকের রেকটি তুলতেই তার কেনা বড় রেড স্ন্যাপার মাছটি ভিতরে দেখতে পান তিনি।
ভিডিওতে দেখা যায়, অন্ধকার কোণে কেনো মাছ কাটা হয়, পর্যটকের করা এমন প্রশ্নের জবাবে মাছ কাটার দায়িত্বে থাকা ছেলেটি উত্তেজিত হয়ে বলেন, চিপার মধ্যেই তো কাটবে। এটা কেটে আপনাকে দেখাচ্ছে না! সামনে কাটতে হলে সামনে গিয়ে বলবেন।
গত সোমবার (৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম থেকে আগত আরেক পর্যটক শাহেদ কাউসার বলেন, প্রথম দিন সুগন্ধা পয়েন্টে মাছ কিনে অল্প সময়ে কেটে দেয়। এতো দ্রুত কেমনে জিজ্ঞেস করতেই সে বলে আমরা সবসময় কাটি তাই কাটতে বেশি সময় লাগে না। সন্দেহ হওয়ায় পরেরদিন দরদাম করে প্রায় ৪০০ টাকায় টুনা মাছ কেনার পর কাটতে নিয়ে গেলে ভিডিও করার সময় ভিডিও করতে নিষেধ করেন বিক্রেতা। পরবর্তীতে গ্যাস শেষ বলে এমন অযুহাতে তিনি আর মাছটি আমার কাছে বিক্রি করেনি।
আরেক পর্যটকের বরাতে জানা যায়, অনেক দামে মাঝারি থেকে বড় আকারের মাছগুলো বিক্রি করে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। বারবিকিউ করার প্রথম ধাপ হিসেবে মাছটি কাটার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় অন্ধকারাচ্ছন্ন ও প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা একটি জায়গায়। এ জায়গাটাতে একসাথে চার পাঁচটি দোকানের মাছ কাটার কারণে সব সময় এক ধরণের ভিড় লেগেই থাকে। এই সুযোগে পর্যটকের পছন্দ ও দরদাম করে কেনা তাজা মাছটি বদলে আগুনে ঝলসানো হয় পঁচা বাসি কিংবা কমদামী ভিন্ন জাতের কোনো মাছ।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত উপ মহাপরিদর্শক আপেল মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের যে ফিস ফ্রাই এর দোকান গুলো আছে মাঝে মাঝে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো আমাদের কাছে আসে। তাই যখনই অভিযোগ আসে তখনই আমরা সাথে সাথে অ্যাকশন নেই! মোবাইল কোর্ট করি আমরা। যাতে তাকে এলার্ট করে দেয়া হয়। যদি কোন ধরনের অভিযোগ পাই আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নিব। বেশ কয়েকবারই এসব প্রতারকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যেন এমন কারো সাথে প্রতারণা করতে না পারে সেটির জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মূলত হাজার হাজার দেশি বিদেশি পর্যটক বছরজুড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসেন কক্সবাজারে। নির্জনে সময় কাটাতে চাওয়ার কারণে এ ধরনের চাক্ষুষ প্রতারণার সম্মুখীন হলেও সহজে কোন ঝামেলায় জড়াতে চান না তারা। আবার অভিযোগ জানানোর মত কোনো সুনির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ী থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।