ঐকমত্য কমিশনকে ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান বিশিষ্ট ৫৩ নাগরিকের

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট ৫৩ জন নাগরিক।

আজ শনিবার (১ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতে তারা এ আহ্বান জানান।

এতে বলা হয়, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে একদল মানুষের ঐকান্তিক চেষ্টার ফল বহুল আলোচিত এই জুলাই সনদ। যার জন্য তারা ধন্যবাদ প্রাপ্য। তবে এ সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ প্রকাশ হওয়ার পর নতুন করে অনৈক্যের সুর বেজে উঠেছে।

বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘আমরা মনে করি- জাতীয় ঐক্যকে প্রাধান্য দিয়ে সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ঐকমত্যে পৌঁছানো পর্যন্ত ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম চলমান থাকা জরুরি। অন্যান্য দেশের সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমরা যেমন দেখি একাধিক বছরব্যাপী তারা আলাপ জারি রাখে, আমরা মনে করি বর্তমান সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্যে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া সমীচীন হবে।’

সংবাদমাধ্যম থেকে পাওয়া খবর থেকে জানা যায়, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব থেকে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (আপত্তি) বাদ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে অনৈক্য স্পষ্ট হয়েছে।

তারা আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি- ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সব বিষয়ে সব দল একমত হবে এমনটা আশা করা অযৌক্তিক। সে ক্ষেত্রে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদে এবং সংসদের বাইরে এসব আপত্তি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া জরুরি। কেবল আলাচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানো আমাদের সবার জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। সে ক্ষেত্রে ঐকমত্য কমিশন তাদের দেওয়া ২৭০ দিনের (নয় মাস) সময়সীমা বাড়িয়ে দুই বছর বা যৌক্তিক সময় নির্ধারণ করতে পারে।’

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সংবিধান যেকোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্ব এবং সম্মিলনের প্রতীক। সংবিধান ও সংসদের কার্যক্রম, মর্যাদা অটুট রাখতে ঐক্যের বিকল্প নেই। ঐকমত্য কমিশন নোট অব ডিসেন্ট বাদ দেওয়ার ফলে এ ঐক্য বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আপত্তির মীমাংসা না করে তাড়াহুড়া করে সংবিধানের সংস্কার আনলে অনৈক্য দীর্ঘস্থায়ী হবে ও বাংলাদেশের রাজনীতিতে গভীর সংকট দেখা দিতে পারে।

আরও উল্লেখ করা হয়, একই সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে ঐক্য না থাকলে পলাতক ফ্যাসিস্ট এবং তার সহযোগী শক্তির জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। যার ফলে সনদ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য নির্ধারিত গণভোট বা জাতীয় নির্বাচন আয়োজনও ব্যর্থ হতে পারে।

বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘সর্বোপরি আমাদের মনে হয়েছে, ঐকমত্য কমিশনে লেখক, চিন্তক, অ্যাক্টিভিস্ট ও সুশীল সমাজসহ দেশের অন্যান্য অংশীজনের সংযুক্তি বিবেচনা নিতে পারে। অরাজনৈতিক অংশের অংশগ্রহণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার বিভেদ কমিয়ে আনতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সব দল ও মতের ঐক্যের ওপর। আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানাই।’

বিবৃতিতে যারা সম্মতি জানিয়েছেন তারা হলেন কবি কাজল শাহনেওয়াজ, শিক্ষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর রাজী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার, ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোস্তফা নাজমুল মনসুর তমাল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল ফজল, আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ, লেখক ও সম্পাদক রাখাল রাহা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জি এইচ হাবীব, কবি লেখক ও সংগঠক নাহিদ হাসান, গবেষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আবুল কালাম আল আজাদ, কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদ, নৃবিজ্ঞানী সায়েমা খাতুন, কথাসাহিত্যিক গাজী তানজিয়া, মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন, কথাসাহিত্যিক সালাহ উদ্দিন শুভ্র, প্রকাশক সাঈদ বারী, প্রকাশক মাহাবুবুর রহমান, কবি মৃদুল মাহবুব, সঙ্গীতশিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অমল আকাশ, কবি ও সংগঠক চিনু কবির, কবি ও অনুবাদক জামাল ভাস্কর, সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম সাব্বির, আইনজীবী অ্যাডভোকেট মমিনুর রহমান, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সঙ্গীতশিল্পী ইমামুল বাকের এপোলো।

এ ছাড়া সাংবাদিক অনি আতিকুর রহমান, কবি ও সাংবাদিক পলিয়ার ওয়াহিদ, কথাসাহিত্যিক রাসেল রায়হান, কবি সানাউল্লাহ সাগর, কবি ও সংগঠক এনামুল হক পলাশ, রাজনৈতিক কর্মী শাকিলা খাতুন, রাজনৈতিক কর্মী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আব্দুল মজিদ অন্তর, গবেষক তানভীর আহমেদ, কবি সোয়েব মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেশকাত চৌধুরী, চলচ্চিত্র গবেষক হারুন-অর-রশিদ, কবি ও কথাসাহিত্যিক তছলিমা শাহনুর, কবি মাসুম মুনওয়ার, লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী আরিফ রহমান, কবি ও কথাসাহিত্যিক জব্বার আল নাঈম, মানবাধিকারকর্মী ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি সদস্য রাফসান আহমেদ, থিয়েটার কর্মী আশরাফুল ইসলাম, কবি ও সম্পাদক সাজ্জাদ বিপ্লব, কথাসাহিত্যিক পিন্টু রহমান, জুলাইযোদ্ধা রকিব লিখন, চলচ্চিত্র নির্মাতা শাহনেওয়াজ আরেফিন, কবি ও কথাসাহিত্যিক শাদমান শাহিদ, কবি ও কথাসাহিত্যিক আফসানা জাকিয়া, কবি ও এক্টিভিস্ট শামীম রেজা, কবি ও এক্টিভিস্ট ফুয়াদ সাকী।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top