চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন চৌধুরী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচলের আগেই একাধিক পিলারে ফাটল ধরা পড়েছে। পাশাপাশি, রাম্প নির্মাণে অসঙ্গতি ও অতিরিক্ত ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেগাপ্রকল্পের নির্মাণ কাজে।
লালখানবাজারে এক্সপ্রেসওয়ের একটি র্যাম্প নেমেছে। এখানে র্যাম্পের চারটি পিলারে দেখা দিয়েছে ফাটল। পিলার নম্বরগুলো হলো– পিআর-১ থেকে ৩ ও আপওয়ার্ড পিয়ার বা ইউপিআর-২২।
বিশেষজ্ঞরা ফাটলের গভীরতা যাচাই ও মেরামতের পদ্ধতি নির্ধারণে উচ্চতর কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু সে সবের তোয়াক্কা করেনি সিডিএ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিজেরাই সেটি মেরামত করে। অবশ্য তাদের দাবি, এই ফাটল এক্সপ্রেসওয়ের সক্ষমতায় কোনো প্রভাব ফেলবে না।
বিষয়টি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দৃষ্টিগোচর হলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের গুণগত মান যাচাইয়ে তিন সদস্যের সাব-কমিটি গঠন করা হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফকে কমিটির সভাপতি করা হয়। সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান মজনু ও পারভীন জামান এ কমিটির সদস্য। অন্য সদস্যরা দুই দিন চট্টগ্রামে থেকে সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। বিশেষ আমন্ত্রণে কমিটির সঙ্গে পরিদর্শনে আসবেন গণপূর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শরীফ আহমেদ।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তদন্ত উপ-কমিটি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে অনিয়মের সত্যতা দেখতে পান।পরিদর্শন শেষে কমিটির সদস্যরা হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বিশেষজ্ঞ দলের পরীক্ষায় অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেলে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মহিউদ্দিন চৌধুরী এলিভেটেড এক্সেপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে সরেজমিন পরিদর্শন শুরু করেন তদন্তে গঠিত উপকমিটির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। তার সঙ্গে ছিলেন তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. মজিবুর রহমান।
সংসদীয় কমিটির দুই সদস্য ল্যাডারে চড়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলারের ফাটল পরীক্ষা করে দেখেন। এরপর ফাটল দেখার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন এম এ লতিফ। বহুল প্রতীক্ষিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত হওয়ার মধ্যেই পিলারে ফাটল এবং কাজের মান নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুললো গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি।
এম এ লতিফ বলেন, প্রকল্পের নির্মাণ সামগ্রীতে ত্রুটি রয়েছে। এছাড়া যেখানে সেখানে র্যালম্প নির্মাণ ও অতিরিক্ত ব্যয় বৃদ্ধিসহ রয়েছে নানা অনিয়ম। বিশেষজ্ঞ দলের পরীক্ষায় দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে নেয়া হবে ব্যবস্থা।তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের শুরুতে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে হয় চার হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলাকালে গত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের চারটি পিলারে ফাটল ধরে। চারটি পিলারই লালখান বাজার অংশে। তবে ফাটলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোনো ক্ষতি হবে না বলে দাবি করেছে প্রকল্পের বাস্তবানকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, শতভাগ গুণগত মান নিশ্চিত করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ করা হয়েছে। সব কাজে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে হয়েছে। পরিদর্শনে স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদও এসেছেন।
এ প্রকল্প যখন অনুমোদন হয়, তখন তিনি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছিলেন। মূলত সে অনুযায়ী কাজ হয়েছে কিনা, তা দেখতে আসছেন।
নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও চীনের র্যা ঙ্কিন।তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের জুনে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৫ পর্যন্ত।
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, আমরা শুরু থেকে বলে আসছি, প্রকল্পটি ৯৯ শতাংশ মানুষের কোনো উপকারে আসবে না। মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে বারবার নকশা নিয়ে আপত্তি ওঠার মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, প্রকল্পটি কতটা অপরিকল্পিত।
চাটগাঁ নিউজ/এসআইএস