এবার পৃথিবীর দশম সর্বোচ্চ পর্বত আরোহণের লক্ষ্যে বাবর আলী

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: ২০২৪ সালে একই অভিযানে বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট ও চতুর্থ উচ্চতম পর্বত মাউন্ট লোৎসে আরোহণের পর এবার পৃথিবীর দশম সর্বোচ্চ পর্বত অন্নপূর্ণা-১ আরোহণের লক্ষ্যে নেপাল যাচ্ছেন পর্বতারোহী ডা. বাবর আলী।

নেপালের গণ্ডকী প্রদেশে অবস্থিত ২৬ হাজার ৫৪৫ ফুট উচ্চতার অন্নপূর্ণা-১ শৃঙ্গটি বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক পর্বত হিসেবে স্বীকৃত।

পর্বত গাত্রের খাড়া ঢাল, তুষারধসের প্রবণতা এবং অনিশ্চিত আবহাওয়া- এই তিন মিলে এই পর্বতে আরোহণ পর্বতারোহীদের কাছে সব সময়ই কঠিন বলে বিবেচিত হয়ে এসেছে।

আর এই ভয়ানক পর্বতে এটিই হতে চলেছে বাংলাদেশ থেকে প্রথম অভিযান, যা আয়োজন করছে পর্বতারোহণ ক্লাব ‘ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স’।

বাবর সফলভাবে অন্নপূর্ণা-১ শৃঙ্গে আরোহণ করতে পারলে এটি হবে তাঁর ৩য় আট হাজার মিটারের পর্বত অভিযান।

শনিবার (২২ মার্চ) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে পর্বতারোহণ ক্লাব ‘ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিযানের বিস্তারিত জানানো হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অভিযানের ব্যবস্থাপক এবং ক্লাবটির বর্তমান সভাপতি ফরহান জামান। বক্তব্য দেন ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স এর উপদেষ্টা শিহাব উদ্দীন এবং পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ভিজুয়াল নিটওয়্যারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ নুর ফয়সাল।

এই অভিযানে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বাবরের পাশে দাঁড়িয়েছেন ফ্লাইট এক্সপার্ট, এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যাল। দেশের পর্বতারোহণ মহলের পরিচিত মুখ ও পর্বত অনুরাগীরাও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে বাবরের হাতে তুলে দেওয়া হয় জাতীয় পতাকা।

পর্বতারোহণে ডা. বাবরের পথচলা শুরু ২০১৪ সাল থেকে। ট্রেকিং-এর জগতে হাতেখড়ি হয় ২০১০ সালে; পার্বত্য চট্টগ্রামের নানান পাহাড়ে পথচলার মধ্যদিয়ে। চট্টগ্রামের পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক তিনি। এই ক্লাবের হয়েই গত ১১ বছরে হিমালয়ের নানান শিখরে অভিযান করে আসছেন তিনি। ভারতের উত্তর কাশীর নেহরু ইন্সটিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং থেকে মৌলিক পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন ২০১৭ সালে। ২০২২ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম দুর্গম ও টেকনিক্যাল চূড়া আমা দাবলাম (২২,৩৪৯ ফুট) আরোহণ করেন বাবর। ২০২৪ সালে একই অভিযানে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট (২৯,০৩১ ফুট) ও চতুর্থ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট লোৎসে (২৭,৯৪০ ফুট) আরোহণ করেন। একই অভিযানে দুটি ৮ হাজার মিটার পর্বত আরোহণের কৃতিত্ব নেই আর কোনও বাংলাদেশি পর্বতারোহীর।

প্রসঙ্গত, পৃথিবীতে সর্বমোট ১৪টি আট হাজার মিটার (২৬,২৪৬ ফুট) কিংবা তার অধিক উচ্চতার পর্বত আছে।

সংবাদ সম্মলনে বাবর বলেন, ‘এভারেস্ট-লোৎসে অভিযানের পর থেকেই বিশ্বের ১৪টি আট হাজার মিটার পর্বত আরোহণের ইচ্ছা পোষণ করছি আমি। অন্নপূর্ণা-১ অভিযান সে লক্ষ্যের দিকে আরও একটি পদক্ষেপ। ধীরে ধীরে বাকি পর্বতগুলোর চূড়া ছুঁতে চেষ্টা করব। তবে অন্নপূর্ণা-১ অভিযান নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং। সামিটের সাথে পর্বতে প্রাণ হারানো আরোহীদের অনুপাত লক্ষ্য করলেই এই পর্বতের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। বেশিরভাগ পর্বতারোহীই বিশ্বের উঁচু সব পর্বতে দেশের পতাকা হাতে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। আমি সব সময় চ্যালেঞ্জিং আর নতুন কিছু করতে পছন্দ করি বলেই অন্নপূর্ণা-১ এর মতো শৃঙ্গ বেছে নিয়েছি’।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সোমবার (২৪ মার্চ) অভিযানের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়বেন বাবর। পর্বতারোহণের প্রয়োজনীয় অনুমতি ও নানান সরঞ্জাম কেনার কাজ শেষ করে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে পোখারা হয়ে তাতোপানির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন তিনি। দিন চারেকের ট্রেক শেষে পৌঁছাবেন অন্নপূর্ণা নর্থ বেস ক্যাম্পে। মূল অভিযান শুরু হবে ওখান থেকেই।

বেস ক্যাম্প থেকে ওপরের ক্যাম্পগুলোতে উঠা-নামা করে শরীরকে অতি উচ্চতার সাথে খাপ খাইয়ে নেবেন এই পর্বতারোহী। পুরো অভিযানে সময় লাগবে প্রায় ৪০ দিন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ মাসের ৩য় সপ্তাহ কিংবা শেষ সপ্তাহে চূড়ায় আরোহণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন অভিযানের ব্যবস্থাপক ফরহান জামান।

চাটগাঁ নিউজ/এমকেএন

Scroll to Top