এবার চাকরি হারালেন ইউনিয়ন ব্যাংকের ২৬২ কর্মকর্তা!

নিজস্ব প্রতিবেদক : সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) ও ইসলামী ব্যাংকের পর এবার চাকরি গেল ২৬২ জুনিয়র অফিসারের।

সোমবার (১৮ নভেম্বর) বেশ কয়েকজন অফিসার তাদের চাকরিচ্যুতির আদেশের চিঠি পেয়েছে বলে চাটগাঁ নিউজকে নিশ্চিত করেছেন। সেই নোটিশের কপিও তারা চাটগাঁ নিউজে পাঠিয়েছেন।

এ বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করতে মুঠোফোনে কথা হয় ইউনিয়ন ব্যাংকের এইচআর প্রধান মো. কবিরুল হাসানের সাথে। তিনি ২৬২ জনের চাকরিচ্যুতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

চাকরিচ্যুত কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২৬০ জনের বেশি ব্যাংক কর্মকর্তাদের চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এই সংখ্যা আরও বেশি।

কয়েকজন থেকে পাওয়া টার্মিনেশন লেটার থেকে জানা যায়, ৪ এপ্রিল ২০২৪ সালে তাদের দেয়া অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারের ধারা অনুযায়ী তাদেরকে ১৮ নভেম্বর থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। চিঠিতে দেখা যায়, ওই চিঠি ইস্যুর তারিখও ১৮ নভেম্বর। অর্থাৎ তাদেরকে একদিনের নোটিশে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

এদিকে, চাকরি হারানো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাংক কর্মকর্তা মুঠোফোনে চাটগাঁ নিউজকে জানান, তারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন। কিন্তু তারা আজ নিজেরাই বৈষম্যের শিকার।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় ছাঁটাই আতঙ্ক শুরু হয়। বিশেষ করে মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন হওয়া ব্যাংকগুলোর কর্মীরাই পড়েন বিপাকে। ইতিমধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল) ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকার সময়ে নিয়োগ দেওয়া ৫৭৯ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করেছে। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকও (ইউসিবি) শতাধিক কর্মকর্তাকে বাদ দেওয়ার তালিকা চূড়ান্ত করেছে। এর মধ্যে অনেকের বাড়ি শুধু চট্টগ্রামে হওয়ার কারণে তাঁদের নাম ছাঁটাইয়ের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। ব্যাংকটির প্রায় ৪০ কর্মকর্তা ইতিমধ্যে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, কমার্স, গ্লোবাল ইসলামীসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকও এখন কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২২ সালের জানুয়ারিতে এক প্রজ্ঞাপনে নির্দেশনা দেয়, লক্ষ্য অর্জন না করার অজুহাত তুলে ব্যাংকারদের চাকরিচ্যুত করা যাবে না। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, শুধু নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে না পারা বা অদক্ষতার অজুহাতে ব্যাংক-কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাপ্য পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা বা পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না।

জানা গেছে, সম্প্রতি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চাকরিচ্যুত ৫৭৯ জন কর্মকর্তার কর্মকর্তাদের অধিকাংশের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায়। অভিযোগ আছে, পরীক্ষা ছাড়াই তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। নিয়োগপ্রক্রিয়া আইনসম্মত ছিল না। এরপর ইসলামী ব্যাংকে নিয়োগ পেয়েও চাকরিচ্যুত হন ২৫০ জন প্রার্থী।

এদিকে, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) শীর্ষ পর্যায়ের ৪০ কর্মকর্তাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগে বাধ্য করার পর তারা পদত্যাগ করেছেন। এর মধ্যে অর্ধেকেই বিভিন্ন শাখার ব্যবস্থাপক; অন্যরা প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। ব্যাংকটি সব মিলিয়ে ১০০ কর্মকর্তাকে বাদ দেওয়ার তালিকাভুক্ত করেছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের মধ্যে ছাঁটাই-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পদত্যাগের নির্দেশ পাওয়া দুজন কর্মকর্তা দাবি করেন, শুধু চট্টগ্রামে বাড়ি হওয়ার কারণে তাদের পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। কোনো ধরনের অনিয়মে তাদের সম্পৃক্ততা নেই। যেসব বিভাগে অনিয়ম হয়েছে, সেখানে তাঁরা কখনো কাজ করেননি।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top