চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালে হাইকোর্টের রায় বাতিলের দাবিতে এবার চট্টগ্রাম নগরীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (৫ জুলাই) চট্টগ্রাম নগরীর দুই নম্বর গেইট মোড় এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। প্রায় এক ঘণ্টার মতো রাস্তা আবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এতে ওই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েন ওই এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, এই বৈষম্যমূলক কোটা প্রথা মানি না। কোটার কারণে মেধাবীরা তাদের সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছে না। কোনো মেধাবী শিক্ষার্থী পরীক্ষায় ৮০ পেয়েও চাকরি পাবে না, আর কোটাধারীরা সহজেই চাকরি পাবে এটা মানা যায় না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
চবির শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিকেল পাঁচটায় প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী দুই নম্বর গেইটে অবস্থান নেই। এরপর ৫টা ৫০ মিনিটে সেখান থেকে সরে যায়। পুলিশ আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে। সরকারি চাকরিতে প্রথম গ্রেড থেকে ২০ গ্রেড পর্যন্ত প্রতিবন্ধী ছাড়া সব কোটা বাতিলের দাবিতে সারা বাংলাদেশে টানা তিনদিন আমাদের কর্মসূচি আছে।’
‘আগামীকালও (শনিবার) একই জায়গায় আমরা অবস্থান নেব। সব কলেজের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও থাকবে। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
আব্দুর রহমান নামের একজন বলেন, কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করার কারণে ২ নং গেইট এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে জনগণকে ভোগান্তি দিয়ে কোন আন্দোলন সফল হতে পারে না।
চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা রাস্তায় বিক্ষোভ করেছিলেন কিছু সময়ের জন্য। পরে তারা আবার রাস্তা ছেড়ে চলে গেছেন।’
২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এ কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে সব ধরনের কোটা ১০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার দাবিতে ওই বছর আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে ওই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে সব ধরনের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে সরকার।
ওই সময় ৩০ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান-নাতি-নাতনি কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা ও ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা চালু ছিল সরকারি চাকরিতে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে নবম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে সব ধরনের কোটা বাতিল করা হয়।
ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ২০২১ সালের জুন মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে সরকারি চাকরিতে ৯ম গ্রেড থেকে ১৩ম গ্রেড পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে জারি করা পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
রিটের শুনানি নিয়ে ৫ জুন ঘোষণা করা রায়ে হাইকোর্ট পরিপত্রের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিলের অংশটি অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপরই শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা আবার ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র ব্যানারে নতুন করে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছেন।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ