নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে যখন নানান দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন চলছে ঠিক সে সময়ে চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু টানেলের শ্রমিকরাও সরব হয়েছেন বেতন বৈষম্যের বিরুদ্ধে। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে তাদের এই আন্দোলন বলে জানা গেছে। এতে অংশ নিয়েছেন প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক।
বুধবার (৯ অক্টোবর) সকাল থেকে কাজ বন্ধ রেখে প্রায় ঘন্টাব্যাপী টানেল চত্বরে চলে এই আন্দোলন।
জানা গেছে, সকল শ্রমিকদের বেতন এক নিয়মের বাড়ানোর কথা থাকলেও টানেল রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা টিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন্স এন্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি বা ফোর সি বেতন বৃদ্ধিতে ব্যাপক অনিয়ম করেছে। যেখানে কারো বেতন বাড়ানো হয়েছে ৫%, কারো ২০% আবার কারো বা ৫০% পর্যন্ত এমনটি অভিযোগ তুলেছেন আন্দোলনরত শ্রমিকরা।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলা এই আন্দোলনে এক পর্যায়ে তাদের সাথে কথা বলতে আসেন চায়না কমিউনিকেশন্স এন্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানির অপারেশন ডিরেক্টর মি. সোম। শ্রমিকদের উদ্দেশে ইংরেজিতে তার বক্তব্য দেয়ার একটা ভিডিও এসেছে ‘চাটগাঁ নিউজে’র হাতে।
ভিডিওতে তাকে বলতে শুনা যায়, বর্তমানে যার যে বেতন রয়েছে সেই বেতনের ৫% বৃদ্ধি করা হবে। যদি এটা কারো ভালো না লাগে তবে সে যেন চাকরি থেকে চলে যায়। তবে শ্রমিকদের সেখানে সবার বেতন সমান করার দাবি তুলতে দেখা যায়। একজন শ্রমিক এগিয়ে এসে তার কার্ড দেখিয়ে বলে আমার বেতন এখন ১৮ হাজার টাকা রেকর্ড আছে। অথচ আমি সে টাকা পাইনা। এভাবে বেশ কয়েকজন শ্রমিক তাদের বেতন বৈষম্যের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। যদিও সেতু মন্ত্রণালয়ের লোকজন দাবির ব্যাপারে বিবেচনা করার কথা জানান আন্দোলনরত শ্রমিকদের।
এই বিষয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের একজন সমন্বয়ক জানান, তাদের অরিজিনাল বেতন ধরা হয়েছে অনেক বেশি, চুক্তি অনুযায়ী টাকা গুলো তারা পাচ্ছে ঠিকই কিন্তু শ্রমিকদের কাছে সেই টাকাটা পৌঁছাচ্ছে না।
টানেলের ওয়ার্কসপ সেকশনের ম্যানেজার মঈনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, বেতন নিয়ে শ্রমিদের অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। তারা বিক্ষোভ করে পরে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) কর্মকর্তাদের সাথে শ্রমিক কর্মচারীরা দেখা করে তাদের দাবি জানিয়েছে। আন্দোলন চলাকালীন টানেলে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চায়না এই টিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অধিনে প্রায় ৬১৫ জন শ্রমিক কাজ করে। অথচ বেতন বৃদ্ধির কথা উঠলেই শ্রমিকদের সাথে নানান তালবাহানা করতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি এখন পর্যন্ত অনেক শ্রমিককেই এপয়েন্টমেন্ট লেটার দেয়া হয়নি। এ টানেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে (সিসিসিসি) পাঁচ বছরের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। ঠিকাদারকে দিতে হবে বছরে ৬৮৪ কোটি টাকা। সেই হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণের দৈনিক ব্যয় দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। অথচ প্রত্যাশা অনুযায়ী যানবাহন চলাচল করছে না ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল দিয়ে। ফলে রক্ষণাবেক্ষণের টাকাও তুলতে পারছে না টানেল, যেখানে প্রতিদিনই ক্ষতি প্রায় ২৫ লাখ টাকা।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু টানেলকে বরাবরের মতোই সেনসিটিভ ইস্যু হিসেবে দেখানো হয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। ফলে এই বিষয়ে কোন ধরণের নেগেটিভ নিউজ প্রচার করতেই পারতো না সংবাদ মাধ্যমগুলো। তবে বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শুধু মিডিয়াগুলোই নয়, এবার মুখ খুলছে টানেলে কর্মরত শ্রমিকরাও।
চাটগাঁ নিউজ/ফরহাদ/জেএইচ