এখনও সাইকেলে পত্রিকা বিলি করছেন মিলন নাথ

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি: দিনের আলো ফোটার আগেই, যখন অনেকেই ঘুমে বিভোর, তখনই জীবনের সংগ্রামকে কাঁধে নিয়ে পুরোনো সাইকেলে চড়ে পত্রিকা নিয়ে ঘুরে বেড়ান ফটিকছড়ির সুন্দরপুর ইউনিয়নের পাঁচপুকুরিয়া গ্রামের মিলন নাথ। ভোরের শীতল বাতাস আর জীবনের কঠিন বাস্তবতা সাথে নিয়ে তিনি ছুটে বেড়ান একেকটি গলি, একেকটি বাড়ি। তার কণ্ঠে নেই বিক্রেতার স্বর, আছে দায়িত্ব আর অভ্যাসের টান।

মিলন নাথের জন্ম রেবতী মোহন নাথের ঘরে। দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি পত্রিকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। চট্টগ্রাম শহরে প্রায় ১৫ বছর ধরে হকারি করে সংসারের হাল ধরেছিলেন। একসময় ভাগ্য ফেরানোর আশায় পাড়ি জমান বিদেশে। কিন্তু সেখানে সুখ নয়, বরং জীবনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডিই যেন অপেক্ষা করছিল তার জন্য।

২০১৩ সালের সেই বিভীষিকাময় রাতে প্রবাসের অগ্নিকাণ্ডে আগুনের লেলিহান শিখা কেবলই গ্রাস করেনি তার ঘরবাড়ি, গ্রাস করেছে তার প্রাণের তিনজন—স্ত্রী ও দুই সন্তানকে। মুহূর্তেই তছনছ হয়ে যায় তার পৃথিবী। বুকভরা বেদনা নিয়ে দেশে ফিরে আবার শুরু করেন সেই পুরোনো পেশা পত্রিকা বিক্রি।

প্রতিদিন ভোরে পুরোনো সাইকেল নিয়ে তিনি ঘুরে বেড়ান ফটিকছড়ির অলিগলি। ১২ থেকে ১৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে মানুষের হাতে পৌঁছে দেন খবরের কাগজ। তার পরিশ্রমের বিনিময়ে হয়তো মানুষ খবর জানতে পারে, সমাজ জগতের খোঁজখবর পায়, কিন্তু মিলনের নিজের জীবনে খবর বলতে আছে কেবল সংগ্রামের দীর্ঘ অধ্যায়।

এখন বয়স বাড়ছে। শরীর আর আগের মতো শক্তি জোগায় না। ক্ষয়ে যাওয়া সাইকেলটিও মাঝে মাঝেই তাকে ফেলে দেয় বিপাকে। তার কথায়, আগের মতো পত্রিকা চলে না। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়। বয়স তো অনেক হলো, এখন আর আগের মতো পারি না।

মিলন নাথের জীবন যেন আমাদের সমাজের এক নীরব প্রতিচ্ছবি—যেখানে মানুষ অগণিত কষ্ট নিয়েও নিজের কর্তব্য থেকে সরে দাঁড়ায় না। প্রতিদিন অন্যদের হাতে খবরের কাগজ তুলে দিলেও, তার নিজের জীবনের খবর কেউ রাখে না।

তবুও তিনি হার মানেননি। সংগ্রামের মাঝেই খুঁজে নিয়েছেন বেঁচে থাকার সেই দায়িত্ব। হয়তো সমাজের সহমর্মিতা আর ভালোবাসার হাত প্রসারিত হলে তার জীবনের বাকি পথ কিছুটা হলেও সহজ হয়ে উঠবে।

চাটগাঁ নিউজ/আনোয়ার/এমকেএন

Scroll to Top