বাঁশখালীতে পরকীয়ার বলী ১২ ঘর!

বাঁশখালী প্রতিনিধি:  বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়নের জয়নগর পাড়ায় ঘটে যাওয়া একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাংলা লোক সংগীতের একটি গানের পংক্তি মনে পড়ে গেল- ‘কালো ভ্রমর জানে মধুর মর্ম্ম সই গো গোবরা পোকা জানে না/ এমন প্রেমের নদীতে সই গো.. ডুব দিলাম না। চণ্ডীদাস আর রজকিনী তারা প্রেমের শিরোমণি/ তারা এক মরণে দুইজন মরে সই গো.. এমন মরে কয় জনা?

ধোপার মেয়ে রজকিনী আর ব্রাহ্মণ কূলের চন্ডীদাস। জাত-পাত ভেদাভেদ আর ছোঁয়াছুঁয়ির কুসংস্কারে ভরা হিন্দু সমাজ এই প্রেম কখনো মেনে নেয়নি। তাই চন্ডীদাস রজকিনীর ১২ বছরের এই প্রেমও পায়নি পূর্ণতা।

জনশ্রুতি আছে, রজকিনীর বিয়ে হয় স্বগোত্রীয় আরেক লোকের সাথে। রজকিনী যখন পালকিতে করে স্বামীর বাড়ি রওনা দেয় তখন চন্ডীদাস দূর থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেন প্রিয় প্রেমিকার বিদায়। একসময় রজকিনীর পালকি আর দেখা যায় না। তখন চন্ডীদাস গাছের মগডালে উঠে বসেন যাতে করে তার হারানো প্রিয়ার পালকিটি একটু দেখা যায়। বাসর রাতে রজকিনী বিষপানে আত্মহত্যা করে।

চাম্বল ইউনিয়নের জয়নগরের হারুণের ছেলে বাবুল আর করিমের স্ত্রীর প্রেমও ঠিক এমনই এক দৃষ্টান্ত মাত্র। স্থানীয় হারুনের পুত্র বাবুলের সাথে পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা করিমের স্ত্রীর সাথে চলছিল পরকীয়ার সম্পর্ক। এই পরকীয়ার সম্পর্ক জানাজানি হলে প্রেমিক বাবুলের সাথে করিমের ঝগড়া বিবাদ শুরু হয়। একপর্যায়ে তা রূপ নেয় প্রেম প্রতিশোধে। প্রতিশোধ নিতে প্রেমিক বাবুল গতকাল মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দিনে ‍দুপুরে প্রকাশ্যে করিমের ঘরে আগুন দিতে তেড়ে আসে। কিন্তু প্রতিবেশিরা এগিয়ে আসাতে বাবুলের সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তবে ক্ষুব্ধ প্রেমিক বাবুল দমে যায় নি। করিমের ঘরটিতে দুপুরে আগুন লাগাতে না পারলেও রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে আগুন লাগিয়ে দেয় বাবুল।

একদিকে শীতকাল, তার উপর গভীর রাতের লাগানো আগুন মুহুর্তেই পার্শ্ববর্তী অন্য ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। আর এক ঘরের আগুন পুড়ে যায় ১২ ঘর। এই আগুনে করিমের বসতঘরসহ পাশের আরো ১১টি ঘর ভষ্মীভূত হয়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডে একই এলাকার মৃত লেদু মিয়ার পুত্র মুহাম্মদ মিয়া, মুহাম্মদ এহছান, মৃত সিরাজ মিয়ার পুত্র মুহাম্মদ কালু, মৃত নবাব আলীর পুত্র মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, মুহাম্মদ ইসমাঈল, মুহাম্মদ ইসহাক, মৃত কালু মিয়ার পুত্র মুহাম্মদ করিম, মৃত ইসলাম মিয়ার পুত্র মুহাম্মদ জামাল, মুহাম্মদ কবির, আবদু ছত্তার, আবদু ছবুর, মৃত আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ হারুনের বসতঘর পুড়ে গেছে বলে জানা গেছে।

এ ঘটনায় করিমের প্রতিবেশি ক্ষতিগ্রস্ত ইছমাইলের স্ত্রী সালেহা বেগমও আহত হয়েছেন। তাকে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এই ঘটনায়  ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাবুলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এ বিষয়ে বাঁশখালী ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল স্টেশনের ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, উপজেলার চাম্বল ইউনিয়নের পশ্চিম চাম্বল জয়নগর পাড়া ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় বুধবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছি। আমাদের আলাদা দুটি টিম অগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে। তাছাড়া অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত নিয়ে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘উত্তেজিত জনতা থেকে বাঁচাতে বাবুল নামের এক যুবককে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি নাশকতা কিনা তা খতিয়ে দেখতেছি আমরা। এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেয়নি।’

চাটগাঁ নিউজ/জসিম/ইউডি/এসএ 

Scroll to Top