চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: বেতন-ভাতা ও ছুটি দেয়া নিয়ে সৃষ্ট ক্ষোভ থেকে এম ভি আল বাখেরা জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়াকে খুন করেন লস্কর আকাশ মন্ডল ওরফে ইরফান। সে খুনের আলামত নষ্ট করতে আকাশ মন্ডল একে একে অপর ছয় সহকর্মীকে খুন করে।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে র্যাব-১১ সিপিসি-২ কুমিল্লা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এমন তথ্য জানান র্যাব-১১ এর উপ অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেন।
গ্রেপ্তার হওয়া ইরফানকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব কর্মকর্তা সাকিব জানান, প্রায় ৮ মাস আগে আল বাখেরা জাহাজে চাকরি শুরু করেন ইরফান। জাহাজের কর্মচারীরা ছুটি ও বেতন-বোনাস সময় মতো পেতেন না এবং বিভিন্ন বিল কর্মচারীদের না দিয়ে জাহাজের মাস্টার একাই ভোগ করতেন বলে অভিযোগ ছিল। জাহাজের মাস্টার সব কর্মচারীর ওপর বিনা কারণে রাগারাগি করতেন এবং কারো ওপর নাখোশ হলে তাকে কোনো বিচার বিবেচনা ছাড়া জাহাজ থেকে নামিয়ে দিতেন। এমনকি তাদের বকেয়া বেতনও দিতেন না। এ ব্যাপারে ইরফান জাহাজের সবাইকে প্রতিবাদ করতে বললে কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করত না। ফলে ইরফানের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং এই ক্ষোভ থেকে তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন ইরফান।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৮ ডিসেম্বর তিন পাতা ঘুমের ওষুধ কেনেন ইরফান। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় জাহাজে রাতের খাবারের তরকারির মধ্যে তিন পাতা ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন তিনি। সুকানি জুয়েল ও ইরফান ছাড়া সবাই রাতের খাবার খেয়ে তাদের নিজ নিজ কেবিনে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ২টার দিকে সাহারা বিকন এলাকায় আরও ৮-১০টি জাহাজের সঙ্গে সুকানি জুয়েল এবং গ্রেপ্তারকৃত ইরফান তাদের জাহাজটি নোঙর করেন। পরে সুকানি জুয়েল রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে ইরফান তার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাড়ে ৩টায় প্রথমে মাস্টারকে জাহাজে থাকা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন।
তিনি ভেবে দেখেন, জাহাজে থাকা বাকিরা জেনে গেলে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়তে পারেন। ফলে একে একে সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করেন (ভাগ্যক্রমে সুকানি জুয়েল গলা কাটার পরও বেঁচে যান)। ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সব জাহাজ তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেলে তিনি নিজে জাহাজ চালাতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে মাঝিরচর এলাকায় জাহাজটি আটকা পড়ে। পরে পাশ দিয়ে যাওয়া একটি ট্রলারে বাজার করার কথা বলে উঠে পড়েন ইরফান। এরপর গ্রেপ্তার এড়াতে বাগেরহাটের চিতলমারি এলাকায় আত্মগোপনে চলে যান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঘটনার পর ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব। হত্যায় জড়িত ইরফানকে শনাক্ত করে মঙ্গলবার রাতে চিতলমারী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার দুপুরে চাঁদপুরের হাইমচরে মেঘনা নদীতে এমভি আল বাখেরা জাহাজ থেকে ৫ জনের মরদেহ এবং তিনজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে দুজন মারা যান। নিহতরা হলেন- মাস্টার গোলাম কিবরিয়া, গ্রিজার সজিবুল ইসলাম, লস্কর মাজেদুল ইসলাম, শেখ সবুজ, আমিনুর মুন্সী, ইঞ্জিন চালক সালাউদ্দিন ও বাবুর্চি রানা কাজী।
এ ঘটনায় গতকাল রাতে হাইমচর থানায় হত্যা ও ডাকাতির অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন জাহাজটির মালিক মাহবুব মোর্শেদ।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি