বান্দরবান প্রতিনিধি: বর্ষায় উন্মাতাল কলতানে মুখরিত হয়ে উঠেছে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার অসংখ্য ঝর্ণা ও জলপ্রপাত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দামতুয়া ঝর্ণা। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত অসাধারন একটি ঝর্ণা।
দামতুয়া ঝর্ণা খাড়া পাহাড়ি দেয়াল বেয়ে কলকল, ঝমঝম সুর তুলে উন্মাতাল স্রোত গড়িয়ে পড়ছে নিচের গভীর জলাশয়ে। পাহাড়ের নিস্তব্ধতা যেন সেখানেই ম্লান। উঁচু থেকে পড়া পানির কিছু অংশ আবার জলীয় বাষ্প হয়ে বাতাসে মিশে সেখানে এক ধোঁয়াশাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে। এ যেন পাহাড়ের গভীরে আরেকটি আকাশের মেঘমালা।
এই ঝর্ণা এবং জলপ্রপাতে পাথরে মাটির ধাপগুলো খুবই বিস্ময়কর। যেন সুদক্ষ রাজমিস্ত্রির নিপুন হাতে সৃষ্ট কোন আল্পনা। দামতুয়া জলপ্রপাত এর অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ধাপ প্রমাণ করে যে এটি প্রকৃতির খেয়ালে গড়া অসাধারণ একটি স্থাপত্যশৈলী।
দামতুয়া ঝর্ণাটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। স্থানীয় মুরং আদিবাসীদের কাছে এটি “তুক অ ঝর্ণা” বা “লামোনই ঝর্ণা” নামে পরিচিত। বর্ষাকালে এই ঝর্ণা পূর্ণ যৌবন পায় এবং এর সৌন্দর্য বহুগুণ বেড়ে যায়।
দামতুয়া ঝর্ণা ঠিক কবে থেকে আবিষ্কার হয়েছিল, তার কোনো নির্দিষ্ট তারিখ বা বছর খুঁজে পাওয়া যায়নি। কারণ, এটি স্থানীয় মুরং আদিবাসীদের কাছে বহু বছর ধরে পরিচিত এবং তাদের ভাষায় এর নামকরনও করা হয়। তবে মূলত ২০১৫ সালের দিকে পর্যটকদের কাছে এটি ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করে । তখন কিছু তরুণ পর্যটক দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে এই ঝর্ণাটি খুঁজে বের করে এবং এর বেশ কিছু ছবি ও তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে। এরপর থেকে এটি পর্যটকদের কাছে একটি জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে ওঠে এবং সারাদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলে।
বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য এবং আলীকদমের স্থায়ী বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম রিমন বলেন, প্রকৃতির এক সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর স্থান হলো দামতুয়া ঝর্ণা। এই ঝর্ণার পরিবেশ দেখলে যে কারোর মন ভালো হয়ে যাবে।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক আবু সাঈদ জানান, দামতুয়া ঝর্ণা খুবই সুন্দর। বান্দরবানে যারা ভ্রমনে আসে তাদের এই ঝর্ণা দেখে যাওয়া উচিত।
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল বলেন, আলীকদম উপজেলার দামতুয়া ঝর্ণা দুর্গম হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেক পর্যটক ঘুরতে আসে। পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে সেনাবাহিনী এবং উপজেলা প্রশাসন সর্বাত্বক কাজ করে যাচ্ছে। ঝর্ণার কাছাকাছি কোন রেস্ট হাউজ বা কটেজ না থাকায় পর্যটকদের আলীকদম সদরে অবস্থান করতে হবে। এই ঝর্ণায় যাতায়াতের জন্য ভবিষ্যতে পাঁকা রাস্তা করারও পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ঝর্ণাতে যারা যাবেন অবশ্যই তাদের স্থানীয় গাইড নিয়ে যেতে হবে। তাছাড়াও সেনাবাহিনী এবং আলীকদম উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেই যেতে হবে।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে চকরিয়া আসতে হবে এবং চকরিয়া থেকে বাসে বা জীপে আলীকদম আসতে হবে। এরপর আলীকদম বাজার থেকে মোটরসাইকেল বা চান্দের গাড়ি ভাড়া করে আলীকদম-থানচি সড়কের ১৭ কিলোমিটার পয়েন্টে যেতে হবে। এই স্থানটি আদু মুরং পাড়া নামেও পরিচিত। আদু মুরং পাড়া থেকে আপনাকে গাইড নিতে হবে। এখান থেকে প্রায় ২-৩ ঘন্টার ট্রেকিংয়ের পর আপনি দামতুয়া ঝর্ণায় পৌঁছাতে পারবেন।
দামতুয়া ঝর্ণা ছাড়াও আলীকদম উপজেলায় আরও রয়েছে রূপমুহুরী ঝর্ণা, ওয়াংপা ঝর্ণা, তাংমাইন ঝিরি ঝর্ণা এবং থানকোয়াইন ঝর্ণা।
তাছাড়াও চকরিয়া থেকে আলীকদম যাওয়ার পথে লামা উপজেলার মিরিঞ্জাভ্যালী, মারাইংছাহিলসহ অসংখ্য পর্যটন স্পট ভ্রমণ করতে পারেন এবং আলীকদম থেকে দামতুয়া ঝর্ণায় যাওয়ার পথে দীর্ঘ ১৭ কিলোমিটারের রাস্তায় অসংখ্য পাহাড়ি ভিউ উপভোগ করতে পারবেন।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
দামতুয়া ঝর্ণার পথে যেতে হলে সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে আপনাকে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি জমা দিতে হবে। দুর্গম পথ হওয়ায় বয়স্ক ও শিশুদের নিয়ে ভ্রমণ করা কঠিন হতে পারে।
চাটগাঁ নিউজ/ইলিয়াছ/এমকেএন