নিজস্ব প্রতিবেদক: আর মাত্র একদিন পরেই ‘অমর ২১ ফেব্রুয়ারি’। দিনটি বাংলাদেশে শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হয়। এ দিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও বটে। এ দিবসকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম নগরীর কেসি দে রোডের সদ্য নির্মিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারেই এবার শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন চট্টগ্রামবাসী।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিদর্শনে গিয়ে এমন ঘোষণাই দিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।২১ ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরিতে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে চট্টগ্রামবাসীর কাঙ্খিত নতুন কেন্দ্রীয় এই শহীদ মিনার।
তবে উদ্বোধনের আগেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাটি হকার, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মাদক কারবারিদের দখলে চলে গেছে। আশেপাশে যত্রতত্র যানবাহন পার্কিংয়ের কারণে নিত্য যানজট লেগে থাকে সিনেমা প্যালেস থেকে নিউমার্কেটগামী রাস্তাটাতে।
এইতো গেল দিনের চিত্র। শহীদ মিনার এলাকা রাতের চিত্র আরো ভয়াবহ। সন্ধ্যা হলেই বসে মাদকের আড্ডা। আর রাত বাড়লেই স্থানটি হয়ে ওঠে ভাসমান মানুষের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের নিরাপদ স্থান। যেখানে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত অবাধে চলে দেহব্যবসা। স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে এসব অভিযোগ করে আসলেও এসবে কর্ণপাত করার সময়টুকু যেন কারো নেই!
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহীদ মিনারের আন্ডারপাস সড়কে গড়ে উঠেছে কার, মাইক্রো, বিভিন্ন পরিবহন ও ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির গাড়ি পার্কিং। আবার শহীদ মিনারসহ সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্প এলাকার ওয়াকওয়ে দখল করে হকাররা সাজিয়েছেন তাদের পণ্যের পসরা। এমন অবস্থায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ পুরো সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পটির নান্দনিক সৌন্দর্য বিনষ্টের পাশাপাশি এর মর্যাদা রক্ষা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন নাগরিকরা।
একদিকে দখল, অন্যদিকে চলছে উদ্বোধনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। যেখানে শহীদ মিনারের পাদদেশ, মিনারে ওঠার সিঁড়ি, মুসলিম ইন্সটিটিটউট হল ভবনে উঠার সিঁড়িসহ পুরো এলাকায় চলছে পরিচ্ছন্নতা ও রংয়ের কাজ। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে এ কার্যক্রম চলছে।
সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন ও প্রকৌশল বিভাগের কর্মীরা সেখানে পরিচ্ছন্নতা ও রংয়ের কাজ করছেন। কর্মীদের কেউ ব্যস্ত মিনারের ফ্লোর ধোয়া-মোছা ও পরিস্কারে, কেউ ব্যস্ত রংয়ের কাজে। সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণে দ্রুততার সাথে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। যেন ফুরসত নেই তাদের।
তবে এসবের মধ্যে একেবারে হতশ্রী চেহারা শহীদ মিনার ও সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পকে যুক্তকরা দৃষ্টিনন্দন প্লাজার নিচে সিনেমা প্যালেস-নিউমার্কেটমুখী সড়কটির। এখনো শহীদ মিনার, সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের যাত্রাই শুরু হয়নি। অথচ এরই মধ্যে প্লাজার নিচের সড়কটি পুরোপুরি দখলে চলে গেছে।
সড়ক দখল করে মাইক্রোবাস পার্কিং করে রাখা চালক আবু মুসাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি হাটহাজারী থেকে হাজারী গলিতে একটা ভাড়া নিয়ে এসেছি। ওখানে গাড়ি রাখার জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়ে এখানে গাড়ি পার্কিং করেছি।
কাভার্ডভ্যানের ড্রাইভার মালেক জানান, নিউমার্কেট, রিয়াজুদ্দিন বাজার থেকে ব্যবসায়ীরা মাল কিনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যান। তাদের মালগুলো ভ্যান গাড়িতে করে সংশ্লিষ্ট মার্কেট থেকে এখানে আনা হয়। তারপর আমাদের গাড়িতে লোড করা হয়। নিউমার্কেট, রিয়াজুদ্দিন বাজার এলাকার সড়কে গাড়ি রাখার জায়গা নেই। তাই এখানে গাড়ি পার্কিং করেছি।
এ বিষয়টি অবগত করা হলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম চাটগাঁ নিউজকে বলেন, ওই এলাকায় কোন ধরণের হকার, পণ্য ওঠানামা, গাড়ি পার্কিংয়ের প্রশ্নই উঠে না। কালকেই অভিযান চালিয়ে এসব তুলে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, এটি চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক ও নান্দনিক পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠবে। সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্প শীঘ্রই চট্টগ্রাম তথা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।
উল্লেখ্য, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের অধীনে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩২ কোটি টাকা। পরে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে ২৮১ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় দাঁড়ায়।
চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স পুনর্নির্মাণের লক্ষ্যে ২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর শহীদ মিনারটি ভেঙে নতুন পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
এই প্রকল্পের আওতায় পাবলিক লাইব্রেরি ও মুসলিম ইনস্টিটিউট হল অংশের সাথে সড়কের বিপরীত পাশের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অংশকে একটি প্লাজা দিয়ে যুক্ত করার নকশা করা হয়। ওই নকশা অনুসারে সড়কের উপর দিয়ে প্লাজা নির্মাণের জন্য আগের শহীদ মিনারটি ভেঙে ভিত্তি উঁচু করে একই আদলে নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়।
জানা গেছে, ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে ১৯৬২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামের এই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মিত হয়। সেই থেকেই নগরীর ঐতিহ্য ও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে শহীদ মিনারটি।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ