নিজস্ব প্রতিবেদক : সবাই যখন স্বজন-পরিজনের সাথে ঈদের খুশি ভাগাভাগিতে ব্যস্ত, তখন সেই আনন্দঘন মুহূর্তগুলোকে ‘কোরবানি’ দিয়ে জনগণের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক, গণমাধ্যমকর্মীসহ কিছু পেশার মানুষ। পেশাগত দায়িত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে তাঁরা যেন উৎসব-আনন্দের ঊর্ধ্বে। কর্মস্থলে থেকে তাঁদের দায়িত্ব পালনের মাঝেই এই মানুষগুলো খুঁজে পান ঈদের আনন্দ।
সোমবার (৩১ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের সময়েও হাসপাতালে ভর্তি আছেন অসংখ্য রোগী। খুব বেশি না হলেও জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় আসছে নতুন নতুন রোগী। তবে পাল্টে গেছে হাসপাতালের সেই চিরচেনা রূপ। নেই রোগী ও তাদের স্বজনদের ঢল।
মেডিকেল ঘুরে দেখা যায়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাশাপাশি আছেন শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরাও।
হাসপাতালে রোগীর সেবায় নিয়োজিত থাকা শিক্ষানবিশ চিকিৎসক আবিদ হাসান বলেন, এবারই প্রথম পরিবার ছাড়া ঈদ করছি। এটা আমার জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতা। পরিবারকে বেশ অনুভব করছি, তবে রোগীদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার মজাটাই অন্য রকম।
তিনি আরও বলেন, প্রায়ই ক্লাসে শিক্ষকরা বলতেন- চিকিৎসক হলে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। অনেক আনন্দ বেদনা নিজের মাঝেই লুকিয়ে রাখতে হয়। তবুও মানুষের সেবায় নিজের আত্মনিয়োগ আমাকে বেশ আনন্দ দিচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়েলটি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, পরিবার ছাড়া ঈদ আমার কাছে নতুন না। প্রতিবারই রোগীদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিই, এবারও তাই করছি। মনে হচ্ছে না পরিবার ছাড়া আছি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন বলেন, ঈদ মানুষের মধ্যে আনন্দ নিয়ে আসে। এই আনন্দের মাঝেও অনেকে অসুস্থ হন। আর সুস্থ হলেই ছুটে আসেন হাসপাতালে। আমাদের হাসপাতালে বর্তমান প্রায় আটশ’র অধিক রোগী ভর্তি আছে। চিকিৎসক-নার্স, কর্মচারীদের অনেকেই ডিউটি করছেন। আমরা সকলে মিলে মিলে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিই। তাছাড়া ঈদে সকলের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়। এর মাধ্যমে হাসপাতালের রোগীরাই হয়ে উঠেন আমাদের আরেকটি পরিবার।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঈদ মানেই বিশাল এক দায়িত্ব। ছুটি খুব কম সদস্যেরই মেলে। মিললেও তা দুই-এক দিনের বেশি নয়। তাতে অবকাশের তেমন কোনো সুযোগ নেই। মজার ব্যাপার হলো সবাই এক কাতারে যখন ঈদের নামাজ আদায় করে তখনো তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। সবচেয়ে কষ্টকর মনে হয় যখন কোনো ট্রাফিক পুলিশ ঈদের দিনেও বৃষ্টি, রোদ উপেক্ষা করে তার দায়িত্ব পালন করে। অথচ দেখলে মনেই হবে না তাদের কোনো কষ্ট আছে। রাস্তা বাস, ট্রাক, রিকশাই যেন তাদের পরিবারের সদস্য।
নিরাপত্তাকর্মী
ঈদের ছুটিতে নগরের বিভিন্ন বাসা-বাড়ির তালা পাহারা দেয়ার দায়িত্ব পালন করতে হয় পাহারাদার, দারোয়ান, নিরাপত্তাকর্মীর। সারা বছর হেলায় ফেলায় কাটালেও ঈদ এলে তাদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। ঈদের সময় সবার ছুটি জুটলেও তাদের বেলায় খুব কম সময়ই ছুটি মঞ্জুর হয়। এ কারণে অফিস আদালত, ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মীদের সেই অর্থে কোনো ছুটি নেই।
ইমাম, মুয়াজ্জিন ও ঈদগাহের দায়িত্বরত কর্মী
মসজিদের ইমাম বা মুয়াজ্জিনেরা খুব কম সময়ই ঈদের ছুটি পান। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের পরিবার তাদের থেকে অনেক দূরে থাকে। ঈদে অনেক গুরু দায়িত্ব তাদের ওপর। ঈদের নামাজ পড়ানো, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা ইত্যাদি। কোনোভাবেই দায়িত্ব পালন না করার সুযোগ নেই। ঈদগাহের দায়িত্বে যারা থাকেন তাদের তো ঈদের আগে থেকেই কাজের মধ্যে থাকতে হয়। ঝড়-বৃষ্টি- রোদের কথা মাথায় রেখে মুসল্লিদের জন্য প্যান্ডেল নির্মাণ করা, নির্বিঘ্নে নামাজ পড়ার সুব্যবস্থা করার গুরুদায়িত্ব থেকে ছুটি ভোগ করার কোনো সুযোগ নেই।
গণমাধ্যমকর্মী
রেডিও, টেলিভিশন, পত্রিকা বা বিভিন্ন গণমাধ্যমে যারা কাজ করে তাদের অনেকের ঈদের ছুটি পাওয়া খুব সৌভাগ্যের বিষয়। এবার তিন দিন পত্রিকা অফিস ছুটি রাখা হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য মিডিয়ার সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া কোনো বিরতি নেই। অবশ্য মিডিয়া হাউজগুলোকে ঈদ উৎসব নিয়ে অনেক নিউজ কাভার করতে হয় অথবা প্রোগ্রাম তৈরি করতে হয় এটাও হয়তো ঈদ আনন্দেরই একটা অংশ। কিন্তু পরিবারের সাথে সময় কাটানো, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনের বাসায় ঘুরে বেড়ানো এমন সৌভাগ্য খুব কম জনেরই হয়।
এছাড়াও, বিদ্যুৎ, পরিবহন, শ্রমিক ও সরকারি বিভিন্ন অফিসে জরুরি বিভাগে কর্মরত কিছু কর্মকর্তা জনকল্যাণে বিলিয়ে দেন তাদের ঈদ আনন্দ।
চাটগাঁ নিউজ/এইচএস/এসএ