ঈদগাঁওয়ে ভুয়া পিতা সাজিয়ে রোহিঙ্গার নামে জন্ম নিবন্ধন!

সেলিম উদ্দীন (ঈদগাঁও): কক্সবাজারের  ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নে ভুয়া পিতা সাজিয়ে ছলিম নামের এক রোহিঙ্গা যুবকের নামে জন্মনিবন্ধন করার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য নুরুল হুদার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঈদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিমল চাকমা।

অভিযোগে জানা যায়, বর্নিত ইউনিয়নের ইউছুফেরখীল গ্রামের নুরুল হুদার পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র কৌশলে সংগ্রহ করে ও কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ছলিমের জন্ম নিবন্ধন করা হয়েছে। সাম্প্রতিক ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমের সময় ওই জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য ইসলামাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে ফাইল জমা দেওয়া হয়। পরিষদের পক্ষ থেকে তদন্তে গেলে ভুক্তভোগী পরিবার বিষয়টি জানতে পারে।

পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করা হলে ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপিতে মোহাম্মদ ছলিম বার্মিজ বলে লিখে দেন। বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্য দিদারুল ইসলাম চেয়ারম্যানের নিকট থেকে ১৫ দিনের সময় নিয়েছিলেন কিন্তু অজ্ঞাত কারণে অদ্যাবধি উক্ত রোহিঙ্গার জন্মনিবন্ধন বাতিল করা হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার অনেকে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ছলিমের জন্মনিবন্ধন করার সময় স্থানীয় ইউপি সদস্য দিদারুল ইসলাম মোটা অংকের টাকা গ্রহণ করে এ অনৈতিক কাজে সহযোগিতা করে থাকতে পারেন।

২০০৮ সালে করা আবেদন ২০২১ সালে কার কার সহযোগিতায় সম্পন্ন হয়েছে তা তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা রয়েছে।

সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ছলিম বিগত প্রায় ৩০ বছর আগে মায়ানমার থেকে ইউছুপেরখীল গ্রামে আসেন এবং একই গ্রামের বাসিন্দা হাবিব উল্লাহর মেয়ে মোস্তফাকে  বিয়ে করেন। বর্তমানে ছলিমের ৪ মেয়ে ও ১ ছেলে রয়েছে। মেয়েদের বিয়ের সময় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদেরও জন্মনিবন্ধন করা হয়েছে, করা হয়েছে ছেলেরও।

রোহিঙ্গা ছলিমের শ্যালক নুরুল আলম প্রকাশ হাকিম জানান, তার ভগ্নিপতি রোহিঙ্গা এটা সত্য, তদন্তে আইনানুগ বিষয় তারা মেনে নেবেন। ছলিম কোথায়  জানতে চাইলে পরে যোগাযোগ করবেন বলে জানান।

জানতে চাইলে ইউপি সদস্য দিদারুল ইসলাম জানান, আমি তাকে ভোটার হতে কোন সহযোগিতা করিনি। জানা মাত্র তার ফাইল আটকে দিয়েছি। ২০০৮ সালে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন সেটা তাদের দ্বারা হতে পারে।

বিষয়টি তিনি অস্বীকার করলেও কিন্তু জন্ম নিবন্ধনের কপিতে তার স্পষ্ট স্বাক্ষর দেখা গিয়েছে।

ঈদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মছিউর রহমান জানান, এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে দেয়া হয়নি। এটা তো বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এবং উপজেলা প্রশাসনের কাজ।

তবে অভিযোগ পত্রে স্পষ্ট লেখা আছে যে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অফিসার ইনচার্জ ঈদগাঁও থানাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা মতে ঈদগাঁও থানা পুলিশের একটি দল ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা যাচাই-বাছাই করে এসেছেন।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top