ঈদকে ঘিরে ফের যাত্রী জিম্মির পাঁয়তারা রেল শ্রমিকদের!

সমাধানের চেষ্টা রেল উপদেষ্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাঁচ মাসেরও অধিক মাস বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না এই অজুহাতে আবারও আসন্ন ঈদকে পুঁজি করে যাত্রীদের জিম্মি করার পাঁয়তারা করছে রেলওয়ের শ্রমিকরা।

আর তাই আগামীকাল সোমবার (১৭ মার্চ) থেকে বেতন-ভাতার দাবিতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের অস্থায়ী কর্মচারীরা-টিএলআর (টেম্পোরারি লেবার রিক্রুটমেন্ট)।

তাদের দাবি— প্রায় পাঁচ মাসের অধিক সময় ধরে বন্ধ রয়েছে তাদের সব ধরণের বেতন-ভাতা, পার করছেন মানবেতর জীবন। বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েও কোনো প্রকার সাড়া পাচ্ছেন না তারা। এক প্রকার বাধ্য হয়েই এই সময়টাকে বেছে নিয়েছেন যেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কানে বিষয়টি পৌঁছে।

তবে বিষয়টি অবগত আছেন বলে জানান রেল উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, ‘আমরা সমাধানের পথ খুঁজছি’।

অস্থায়ী কর্মচারীরা জানান, প্রায় পাঁচ মাসের অধিক সময় ধরে তাদের সব ধরণের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। আবার অনেকেই আছেন আট-থেকে দশ মাসের বেতন পাননি। বেতনের দাবিতে বারবার আবেদন করেও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি তারা।

তাদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ শ্রম আইন ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অস্থায়ী কর্মচারীদের বাদ দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নতুন কর্মী নিয়োগের চেষ্টা করছে। এতে জরুরি সেবা কার্যক্রম ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

এদিকে যাত্রীরা বলছেন, প্রতি বছর ঈদ আসলে রেল শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া বেড়ে যায়। সারা বছর খবর থাকেনা ঈদ আসলে তাদের ঘুম ভাঙ্গে। আমাদের জিম্মি করে তারা তাদের স্বার্থ হাসিল করতে চাই।

যাত্রীদের আশংকা, আন্দোলনের ফলে বিঘ্ন হতে পারে ট্রেন চলাচল। এতে ঈদে ঘরমুখো লাখো মানুষের নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছানো নিয়ে তৈরি হবে শংকা।

অন্যদিকে, আন্দোলন নিয়ে শ্রমিক নেতাদের দাবি— উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন ও টিএলআর কর্মচারীদের চাকরির স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী হওয়ার আশায় কাজ করছি, কিন্তু বারবার আমাদের দাবি উপেক্ষা করা হচ্ছে।

জানা গেছে— অর্থ মন্ত্রণালয়ের সমস্যা দেখিয়ে প্রায় ৫-৮ মাস ধরে রেলওয়ের বিভিন্ন দফতরে কর্মরত পোর্টার, গেইটকিপার, খালাসি, ওয়েম্যান, অফিস সহকারী, ওয়েটিং রুম কেয়ারটেকারদের বেতন বন্ধ রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কবে বেতন নাগাদ প্রদান করা হবে তারও কোনো সদুত্তর দিতে পারছেন না কেউ। এতে করে রমজানে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে দিন পার করছেন কর্মচারীরা।

গেইট কিপার রফিকুল ইসলাম বলেন, টাকার অভাবে বাড়িতে বাজার করতে পারছি না। গেল কয়েকদিন ইফতারে পানি খেয়ে ডিউটি করেছি। চাকরি স্থায়ী হবে সেই আশায় এখনো আছি। এই কষ্ট কবে দুর হবে আল্লাহ ভালো জানেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে অস্থায়ী টিএলআর কর্মচারীদের নিয়ে গঠিত শ্রমিক সংগঠনগুলোর মূখ্য সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা শ্রমিক নেতা মো. হোসেন বলেন, আমি দীর্ঘ ৮ বছর রেলওয়েতে অস্থায়ী কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছি। সরকারি গেজেট অনুযায়ী ৩ বছর পর চাকুরী স্থায়ী করার কথা। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সরকারি গেজেট মানছেন না। আমার মতো এমন অনেকেই আছেন যারা চাকরি স্থায়ীর আশায় দিনের পর দিন খেটে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে অস্থায়ী কর্মচারীদের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ শাওন বলেন, আমরা বারবার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে বসতে চাই, সরকারি গেজেট বাস্তবায়ন করে চাকরি স্থায়ী করতে চাই। কিন্তু দুঃখের বিষয় কর্তৃপক্ষ আমাদের কোন বিষয় সমাধান করতেই চায় না। আন্দোলন করলে আশ্বাস দেয় কিন্তু সমাধান আসে না।

বিষয়টি জানতে রেল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি চাটগাঁ নিউজকে বলেন— আমরা সমাধোনের পথ খুঁজছি, কিভাবে এই সমস্যার সমাধান দ্রুত করা যায়।

তিনি আরও বলেন, দাবি যৌক্তিক হলে তা অবশ্যই মানা হবে, তবে তা হবে অফিসিয়াল প্রসিডিউরের মাধ্যমে হতে হবে। যাত্রীদের জিম্মি করে নয়।

চাটগাঁ নিউজ/এইচএস/জেএইচ/এসএ

Scroll to Top