সিপ্লাস ডেস্ক: গ্রাহকের হিসাব থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে তহবিল স্থানান্তর করে আত্মসাতের অভিযোগে ইস্টার্ন ব্যাংক কর্মকর্তা ইফতেখারুল কবিরকে পৃথক মামলায় ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। একই অপরাধে ব্যাংকটির গ্রাহক আজম চৌধুরীকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য দুই আসামি মাহমুদুল হাসান ও সামিউল সাহেদ চৌধুরী খালাস পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা এ মামলায় রায় ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আবদুল মজিদ।
রায়ে ইফতেখারুল কবিরকে আরও ৩৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং আজম চৌধুরীকে ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর পাঁচ মাস সশ্রম কারাদণ্ড দেন বিচারক।
দণ্ডপ্রাপ্ত ইফতেখার কবির নগরীর ডবলমুরিং থানার পূর্ব মাদারবাড়ি দারোগা হাট রোডের আলমগীর কবিরের ছেলে এবং আজম চৌধুরী হাটহাজারী থানাধীন ফতেয়াবাদ চিকনদণ্ডী গ্রামের আবুল খায়ের চৌধুরীর ছেলে। এ পর্যন্ত ইফতেখারুলকে দুদকের দায়ের করা চারটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত।
পৃথক সাতটি ধারায় এ দণ্ড হলেও সর্বোচ্চ হিসাবে ইফতেখার কবিরকে ১০ বছর এবং আজম চৌধুরীকে সাত বছর সাজা ভোগ করতে হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন আদালতে দুদকের পিপি অ্যাডভোকেট কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের প্রায়োরিটি ব্যাংকিং ম্যানেজার মো. ইফতেখারুল কবির নগরীর চান্দগাঁও শাখায় দায়িত্ব পালনকালে ২০১৮ সালের ৩ জুলাই গ্রাহক মিজানুর রহমান ৪০ লাখ টাকার জন্য এফডিআর করার টাকা দেন। কিন্তু ইফতেখারুল জাল জালিয়াতি করে একটি ভুয়া এফডিআর অ্যাডভাইস দেন। পরে মিজানুর রহমানের অরিজিনাল এফডিআরের টাকা অন্য আসামিদের সহযোগিতায় আত্মসাৎ করেন।
পরবর্তীকালে অন্য একটি ঘটনায় গ্রাহকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের বেশ কয়েকটি এফডিআর কেলেঙ্কারির বিষয়ে জানতে পারে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এরপর ব্যাংকের অভিযোগ পেয়ে কমিশনের অনুমোদন নিয়ে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ মামলাটি দায়ের করেন একই কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক (বর্তমানে দুদক সজেকা রংপুরের সহকারী পরিচালক) মো. হোসাইন শরীফ।
তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট ইফতেখারুল কবিরসহ চার আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন দুদক চট্টগ্রাম সজেকা-১ এর সহকারী পরিচালক মাহমুদা আকতার।
চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়। অভিযোগপত্রে দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯-সহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়। পরে বিচার প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার আদালত রায় ঘোষণা করেন। এ ধরনের বিভিন্ন গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ১১টি মামলা হয় ইফতেখারুল কবিরের বিরুদ্ধে।
অ্যাডভোকেট কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু গণমাধ্যমকে বলেন, মামলার দুই আসামি গ্রেফতার হয়ে হাজতে ছিলেন। একজন জামিনে ছিলেন। রায় ঘোষণার সময় কারাগার থেকে দুই আসামিকে আদালতে হাজির করা হয় এবং জামিনে থাকা আসামিও রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির ছিলেন। অন্যদিকে আরেক আসামি আজম চৌধুরী মামলার পর থেকে পলাতক রয়েছে। মামলায় ২১ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালত ১১ জনের সাক্ষ্য নেন। রায় ঘোষণার পর দুই আসামিকে পরোয়ানামূলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
এর আগে একই ধরনের অভিযোগে দুদকের করা আরও তিন মামলায় ইফতেখারুল কবীরকে গত ৩০ জানুয়ারি ২৬ বছর, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২৭ বছর ও ১ জুন যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেন একই আদালত।