চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : ‘সিংহভাগ ইসলামী দল, আমরা একমত হয়েছি যে, ইসলামী দলগুলোর সব ভোট যেন একটা বাক্সে আনা যায়। এর বাইরে আরও যারা দেশপ্রেমিক এবং মানবতাপ্রেমিক আছে, তাদের নিয়ে আমরা যেন সবাই মিলে দেশ গড়তে পারি, এ ধরনের একটা নির্বাচনী সমঝোতা হওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আশা করি, আল্লাহর রহমতে এটা হবে।’
হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম একথা বলেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজারে জামেয়াতুল উলুম আল-ইসলামিয়া মাদরাসায় তাদের মধ্যে বৈঠক হয়।
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের ওপর হামলার ঘটনা মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতা দেখা গেছে উল্লেখ করে চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) এনসিপির ওপর যে মর্মান্তিক একটা অনাকাঙ্খিত আক্রমণ হয়েছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাঁচ আগস্টের পরে একটা সভ্য দেশে যে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে, এটা আমাদের চিন্তা ও কল্পনার বাইরে ছিল। এনসিপি নেতারা ওখানে যাবে এবং সেটা স্পর্শকাতর একটা জায়গা গোপালগঞ্জ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্বটা আরও ভালোভাবে পালন করবে বলে আমরা চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু সে ব্যাপারে আমরা দুবর্লতা দেখেছি। কী কারণে তারা এই দুর্বলতা দেখিয়েছে, যারা দায়িত্বে আছেন আশা করি তারা সেটা গুরুত্ব সহকারে দেখবেন।’
‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারসহ প্রশাসনকে বলব, আপনাদের দায়িত্বের বিষয়ে আপনারা সচেষ্ট হবেন। যারা দেশবিরোধী, যারা এদেশের টাকা পাচার করেছে, মানুষকে খুন করেছে, গুম করেছে, এরা যেন এ বাংলাদেশের ভেতরে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, এ ব্যাপারে আপনারা আপনাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন।’
জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘সবাইকে বলবো, আমরা যারা জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে একাকার হয়ে কাজ করেছিলাম, আমাদের ঐক্য যেন দেশের স্বার্থে নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সবাই সচেষ্ট থাকবো। এ বিষয়ে আমরা সবাই আন্তরিকভাবে লক্ষ্য রাখবো।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে চরমোনাই পীর বলেন, ‘পাঁচ আগস্টের পরে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল চাঁদাবাজির মাধ্যমে এবং বিভিন্ন জায়গা দখল, স্টেশন দখল, মামলা বাণিজ্যসহ নানা নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। কে বা কারা করেছে এটা আমাদের সকলের কাছে পরিস্কার। এ ব্যাপারে যৌক্তিক আলোচনা-সমালোচনা করতেই হবে। এটা যদি না হয় তাহলে তো দেশে সুন্দর একটা পরিবেশ থাকবে না। এটা করতে গিয়ে যদি কারও গায়ে লাগে, আমি অনুরোধ করবো, দেশ রক্ষার স্বার্থে আপনারা বিষয়টাকে নজরে রাখবেন, গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন যেন এটা আর না থাকে, সেভাবে আপনারা কাজ করবেন।’
ঐক্যমত্য কমিশনের কার্যক্রমে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ঐক্যমত্য কমিশনের কার্যক্রম ও আলোচনা চলছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান অগ্রগতি, আমাদের যে আশা-আকাঙ্খা সেটা আমরা দেখিনি। আমাদের সবাইকে দেশের কল্যাণের ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে। দেশকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য আমি সকলকে অনুরোধ করবো।’
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চেয়েছি। দেশ গঠনের জন্য এটা আমরা সুন্দর মনে করেছি। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে প্রতিটি ভোটারের মূল্যায়ন হবে। এককভাবে ক্ষমতা নেয়ার মতো সুযোগ থাকবে না। এজন্যই আমরা এ প্রস্তাব দিয়েছি। ৯১টা দেশে এ পদ্ধতি চলছে, এটা তো নতুন কিছু নয়। এটা বলার কারণে যদি কারও গায়ে লাগে, তাহলে আমরা বলব, দেশের কথা চিন্তা করে তারা যেন ব্যক্তিস্বার্থটাকে অগ্রাধিকার না দেয়।’
মুফতি ইজাহারুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে চরমোনাই পীর বলেন, ‘সেখানে ইসলামের পক্ষে দেশ গঠন করার বিষয়ে আমরা যেন সবাই এক হয়ে কাজ করতে পারি, এ বিষয়টাতে হুজুর গুরুত্ব দিয়েছেন। আমরা উনার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছি। এছাড়া সিংহভাগ ইসলামী দল, আমরা একমত হয়েছি যে, ইসলামী দলগুলোর সব ভোট যেন একটা বাক্সে আনা যায়। এর বাইরে আরও যারা দেশপ্রেমিক এবং মানবতাপ্রেমিক আছে, তাদের নিয়ে আমরা যেন সবাই মিলে দেশ গড়তে পারি, এ ধরনের একটা নির্বাচনী সমঝোতা হওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আশা করি, আল্লাহর রহমতে এটা হবে।’
চাটগাঁ নিউজ/এসএ