সিপ্লাস ডেস্ক: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার জঙ্গি সংগঠন ইমাম মাহমুদের কাফেলার শীর্ষ নেতাসহ ১৫ জনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরফাতুল রাকিব এই আদেশ দেন।
রিমান্ডে নেওয়া ১৫ আসামি হলেন শীর্ষ নেতা নাটোরের গাও পাড়ার জুয়েল মাহমুদ, সিরাজগঞ্জের পুরাবাড়ির সোহেল তানভীর রানা (৩০), কক্সবাজারের রামুর সাদমান আরেফিন ফাহিম (২১), মো. ইমতেজার হাসসাত নাবীব (১৯), গাইবান্ধার চাদপাড়ার রাহাত মন্ডল (২৪), জামালপুরের সোলাইমান মিয়া (২১), নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের আরিফুল ইসলাম (৩৪), বগুড়ার হাটশিপুরের মো. আশিকুল ইসলাম (২৯), পাবনার আতাইকুলার মামুন ইসলাম (২৬), ঝিনাইদহের ছয়াইলের তানভীর রানা (২৪), সাতক্ষীরার তালার জুয়েল শেখ (২৫), পাবনার আতাইকুলার রফিকুল ইসলাম (৩৮), পাবনার সাথিয়ার মো. আবির হোসেন (২০), মাদারীপুরের মেহেদী হাসান মুন্না (২৩) ও টাঙ্গাইলের কোয়েল (২৫)। কারাগারে পাঠানো আসামিরা হলেন যশোরের মোল্লাপাড়ার ফাহিম খান ওরফে নীরব (১৭), পাবনার আতাইকোলার মো. মামুন ইসলাম (১৭)।
উপপুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) মোহাম্মদ আনিসুর রহমান গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আজ বিকেলে আসামিদের রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় আদালতে হাজির করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইনভেস্টিগেশন ইউনিট। একই সঙ্গে ১৫ আসামিকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসির উপপরিদর্শক শাহজাদা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। অপরদিকে দুই আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তিনি। ওই দুজন অপ্রাপ্তবয়স্ক। আসামিদের উপস্থিতিতে শুনানি শেষে আদালত ১৫ জনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন এবং দুজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ দিকে রিমান্ড ফেরত চার নারী আসামিকেও কারাগারে পাঠানো হয়েছে আজ। তাঁরা হলেন সানজিদা খাতুন, মাইশা ইসলাম, আমেনা ও হাবিবা বিনতে শরীফুল। ৯ জঙ্গির সঙ্গে তাঁদেরকে গত ১৩ আগস্ট পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। তদন্ত কর্মকর্তা দুই দিন আগেই জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁদেরকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মিরপুর মডেল থানায় গত ১২ আগস্ট শনিবার মামলাটি দায়ের করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। ওই মামলা সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার ১১ আগস্ট সন্ধ্যা সাতটার দিকে মিরপুর বাংলা কলেজের বিপরীত পাশে ডেসকো অফিসের সামনে তিন চারজন লোককে সন্দেহজনক ঘোরাফেরা করতে দেখলে কাউন্টার টেররিজম একটি ইউনিট তাদের আটক করার চেষ্টা করে। একজনকে ধরতে সক্ষম হয়। তাঁর নাম ফরহাদ হোসেন ওরফে শিপন। ফরহাদ টহল দলকে জানান, ইমাম মাহবুব নামের একজনের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন হিজরতের নামে বিভিন্ন জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাঁরা দেশের আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটানোসহ বিভিন্ন ধরনের হামলা এবং জঙ্গি তৎপরতা চালানোর পরিকল্পনা নিচ্ছেন। ফরহাদ হোসেন আরও জানান, কুলাউড়ায় দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় তাঁদের লোকজন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এবং ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মামলায় আরও বলা হয়, ফরহাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১২ আগস্ট ভোরে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব ট্যাটুলি গ্রামে পাহাড়ি এলাকায় ‘অপারেশন হিলসাইড’ নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে তিনজন নারীসহ ১০ জনকে আটক করে। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য, জেহাদি বই ও ডেটোনেটর জব্দ করা হয়।
এরপর স্থানীয় জনসাধারণ গত ১৪ আগস্ট ভোরে একই এলাকা থেকে ১৭ জনকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। গতকাল মঙ্গলবার দিনভর তাঁদের নিয়ে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানোর পর রাতে ঢাকায় এনে মিরপুর থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জুয়েল মাহমুদ নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের প্রধান। আসামিদের পরিকল্পনা এবং তাঁদের সহযোগীদের গ্রেপ্তারের জন্য ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। এ ছাড়া নতুন জঙ্গি সংগঠনে কারা অর্থায়ন করছে এবং এর পেছনে কারা আছে তা জানতে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।