ইউনূসের হাত ধরেই কালুরঘাট সেতুর দ্রুত বাস্তবায়ন চান চাটগাঁবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর গত বছর ৭ অক্টোবর একনেকে কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতুর অনুমোদন দিয়েছিলেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস। আগামীকাল ১৪ মে তাঁর হাত দিয়েই এ প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হতে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন। এবার ড. ইউনুসের তদারকিতে কালুরঘাট সেতুর দ্রুত বাস্তবায়ন চান চাটগাঁবাসী। সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের খবরে উচ্ছ্বসিত দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ তাবৎ অঞ্চলের কোটি মানুষ এমনটাই আশা করছেন।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, অনুমোদনের পর ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। আগামী মাস দুয়েকের মধ্যে পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হবে। আসন্ন বর্ষার ভরা মৌসুমে নদীর হাইড্রোলজিক্যাল মরফোলজিক্যাল সার্ভে কাজ শুরু হবে। এরপর জমি অধিগ্রহণ ও প্রকল্পের নকশা চূড়ান্তকরণ শেষে ২০২৬ সালের মার্চ- এপ্রিল নাগাদ নির্মাণ কাজ শুরু করবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। ৭০০ মিটার দৈর্ঘ্যের (মূল সেতু) সেতুটি ২০৩০ সালের মধ্যে নির্মাণ সম্পন্নের সময় নির্ধারিত হয়েছে।

এ ব্যাপারে কালুরঘাট সেতুর প্রকল্প পরিচালক আবদুল কালাম চৌধুরী বলেন, সেতুর ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ। কনসালটেন্ট নিয়োগের কাজ প্রক্রিয়াধীন। বর্ষায় নদীর স্রোত, পানির প্রবাহ ও নদী শাসন সংক্রান্ত সমীক্ষার কাজ হবে। এসব কাজ এ বছর শেষ করতে পারব আশা করছি। তারপর আমাদের ফিল্ড ওয়ার্ক শুরু হবে। আগামী বছর কাজ শুরু হবে ইনশাআল্লাহ।

প্রকল্প সূ্ত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের ১১ হাজার ৫৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকার মধ্যে ৭ হাজার ১২৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল (ইডিসিএফ) এবং ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্রমোশন ফ্যাসিলিটি (ইডিপিএফ)। অবশিষ্ট ৪ হাজার ৪৩৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। ভূমি অধিগ্রহণ সরকারি অর্থায়নে হবে।

কালুরঘাট সেতুর মূল প্রকল্পের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ৭০০ মিটার রেল কাম রোড ব্রিজ নির্মাণ, ৬ দশমিক ২০ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ, ২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার সড়ক ভায়াডাক্ট, ৪ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার বাঁধ, ১১ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক কাজ। সেতুর উচ্চতা হবে ১২ দশমিক ২০ মিটার। যাতে করে বড় নৌযানও সেতুর নিচ দিয়ে নদীতে চলাচল করতে পারবে।

নদী থেকে সেতুর এমন উচ্চতা নির্ধারণের কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলেছেন, ১৯৯১ সালে ২৯ এপ্রিল লাইটার জাহাজের ধাক্কায় তৃতীয় কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুটি ভেঙে গিয়েছিল। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতুর উচ্চতা ১২ দশমিক ২০ মিটার করা হয়েছে।

তবে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের খবরে চট্টগ্রামবাসী উচ্ছ্বসিত হলেও সরকারের জোর তদারকিতে এ সেতুর দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চান চট্টগ্রামবাসী। তারা বলছেন, যে সেতুর জন্য দীর্ঘ ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসী আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছে। অবশেষে সে সেতুর কাজ শুরু এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

কালুরঘাট সেতু নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করা সংগঠন বোয়ালখালী কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সাংবাদিক মুস্তফা নঈম বলেন, এ সেতুর একনেক অনুমোদন দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর হাত দিয়ে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হচ্ছে। তাঁর কাছে পুরো চট্টগ্রামবাসী চিরকৃতজ্ঞ। আল্লাহর দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া। নির্মাণ কাজও তাঁর তদারকিতে এগিয়ে চলবে আমরা লক্ষ কোটি জনসাধারণের এমনটাই প্রত্যাশা।

তিনি বলেন, আমার জানামতে, পেপার ওয়ার্কসহ প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ শেষ। এখন ঠিকাদার, কনসালটেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়ার পালা। দ্রুত সময়ের মধ্যে যাতে কাজ শেষ করা হয়, সেজন্য সরকারের নজরদারির দাবি জানাচ্ছি।

১৯৩০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে রেল যোগাযোগের জন্য বর্তমান কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। পরে ১৯৫৮ সালে এ সেতুটি সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। ২০০১ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পর ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুই দফায় এ সেতুটি বন্ধ রেখে সংস্কার কাজ করেছিল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

কক্সবাজারের পথে রেল চালুর উদ্দেশ্যে কালুরঘাট সেতু সংস্কারের জন্য ২০২৩ সালের ১ অগাস্ট থেকে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই বছর ৫ নভেম্বর কক্সবাজারের পথে রেল চলাচল শুরু হয়। সেতুটি গত বছরের অক্টোবরে সাধারণ যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হলেও ৮ ফুটের উপরে কোনো যানবাহন এ সেতু নিয়ে চলাচল করতে পারে না।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ

Scroll to Top