নিজস্ব প্রতিবেদক : গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাই ঘরছাড়া। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অবস্থাপন্ন, স্বচ্ছল নেতারা অনেকেই মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। অনেকেই প্রতিবেশি দেশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অজ্ঞাতবাসে রয়েছেন। আবার যারা দেশ ছাড়তে পারেননি তারা দেশের অভ্যন্তরেই গুপ্তবাসে আছেন- এমন কথা চাউর হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের করা জাতীয় দিবস বিশেষ করে ৭ মার্চ ও ১৫ আগষ্ট ছুটি বাতিলের পর ঘুমিয়ে থাকা চেতনাকে জাগিয়ে দিয়েছেন বলে অনেকের বিশ্বাস।
তবে গুপ্তবাসে আর কতদিন? আর কত রাত্রিই বা কর্মীরা পলাতক জীবন কাটাবে?- এমন পরিস্থিতি থেকে নিস্কৃতি এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সক্রিয়তা বৃদ্ধি করতে হলে রাজনীতির মাঠই একমাত্র পথ। তাই অজ্ঞাতবাসে থাকলেও নেতারা তাদের কর্মীদেরকে উজ্জীবিত করতে উদ্যোগী হয়েছেন। অজ্ঞাতবাসী নেতারা দলের কর্মীদেরকে নানামুখী রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা দিচ্ছেন বলে নির্ভরশীল সূত্রে জানা গেছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল, গোপন বৈঠকসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক সক্রিয়তার জানান দিচ্ছেন।
১৮ অক্টোবর (শুক্রবার) দিবাগত মধ্যরাতে নগরের জামালখান এলাকায় শেখ হাসিনার সমর্থনে বাইক শোডাউনসহ একটি ‘ঝটিকা মিছিল’ বের করে ছাত্রলীগের ৩০/৩৫জন নেতাকর্মী। ‘শেখ হাসিনার ভয় নেই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ এমন শ্লোগানে মুখর মিছিলটি মহসিন কলেজ থেকে শুরু হয়ে জামালখান ডা. খাস্তগীর স্কুল মোড়ে এসে মিছিলটি শেষ হয়। মিছিল শেষে নেতাকর্মীরা দ্রুত সটকে পড়েন। মিছিলের ধারণকৃত ভিডিওটি আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড পেজে পোস্ট করা হয়। তবে এই নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে পড়ে পুলিশ চার আসামিকে গ্রেফতার করেছে।
তারা হলেন- রাকিবুল ইসলাম, ইমরান হায়দার, মহিউদ্দিন ওরফে মাঈনুদ্দিন, বাচ্চু মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে ছাত্র আন্দোলনে গুলিবর্ষণকারী, শেখ হাসিনার সরকার পতন পরবর্তী নাশকতা মামলাভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
সোমবার (২১ অক্টোবর) ভোর ৪টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগান দিতে দিতে ঝটিকা মিছিল বের করেছে। এই মিছিলটি স্থানীয় যুবলীগ নেতা হানিফের নেতৃত্বে হয়েছে। তবে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা মিছিল শেষে জিরো পয়েন্ট রেলস্টেশনের একটি হোটেলে হামলা চালায়। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরাও যুবলীগ নেতা হানিফের ছোট ভাইয়ের দোকান ভাঙচুর করে। পরে হানিফের খামার থেকে বেশ কয়েকটি গরু নিয়ে আসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
তবে গত দুই দিনের ব্যবধানে জামালখান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাকর্মীদের এই ঝটিকা মিছিল কর্মসুচি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, সমর্থকদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ঝটিকা মিছিল ও গোপন বৈঠকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে মিছিল শো ডাউনের মধ্য দিয়ে ঘরে ফিরতে চাচ্ছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। অদৃশ্যে থাকা শীর্ষ নেতাদের নির্দেশেই তৃণমূলের নেতা কর্মীরা এসব কর্মসূচি পালন করছে বলে আওয়ামী লীগের নির্ভরশীল সূত্রে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক পদে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, দেশে থাকা নেতারা আর কতদিন আত্মগোপনে থাকবেন। দল ক্ষমতায় থাকতে হালুয়া-রুটি খেয়েছে সুবিধাভোগীরা। ত্যাগী-নিবেদিত নেতাকর্মীরা কিছু পায়নি। এখন বড়লোক নেতারা ভারত, দুবাই, মালয়েশিয়ায় চলে গেছেন। কিন্তু দেশের মধ্যে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। গোপন বসে থাকার জন্য টাকাপয়সাও অনেক নেতাকর্মীর নেই। বাঁচতে হলে পথে নামতেই হবে।
নির্ভরশীল সূত্রে জানা গেছে, সরকার পতনের পর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহীবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুসহ অধিকাংশ শীর্ষ নেতা বর্তমানে অজ্ঞাতবাসে রয়েছেন। তবে অনুসারী নেতাকর্মীদের সাথে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ চলছে। মুঠোফোন, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বা সংশ্লিষ্ট অ্যাপসের মাধ্যমে নেতারা কর্মীদেরকে সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে নানামুখী নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন তারা।
চাটগাঁ নিউজ/উজ্জ্বল/এসএ