আলু সস্তা, আলুর তৈরি খাদ্যপণ্যের দাম কেন চড়া!

নিজস্ব প্রতিবেদক : আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি হলেও ভাতের পর আমাদের দেশে আলুই এক বহুল প্রচলিত খাদ্য। আলুর তৈরি খাদ্যপণ্যের চাহিদাও প্রচুর। তবে রমজান এলেই এই অলুর চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণে। আর এই তালিকায় রয়েছে- আলুর চপ, শিঙাড়া ও বিভিন্ন স্বাদের চিপস।

গেল বছর ফলন না হওয়ায় হুট করেই বেড়ে যায় আলুর দাম। কেজি প্রতি বিক্রি হতে থাকে ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায়। আর হু হু করে বাড়তে থাকে আলুর তৈরি খাদ্য পণ্যের দাম। দাম বেড়ে যাওয়া আলুর তৈরি খাদ্য পণ্যের তালিকায় সবার আগে উঠে আসে রোজায় ইফতারের জনপ্রিয় খাবার আলুর চপ। এছাড়াও রয়েছে শিঙাড়া ও বিভিন্ন স্বাদের চিপস।

রমজানে সারাদিনের রোজার পর ইফতারে রোজাদারের আলুর চপ ছাড়া যেন চলেই না। খবর নিয়ে জানা যায়, গেল কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর বাজারে আলুর চপের দাম বেড়েছে ২০-৩০ শতাংশ, যা সাধারণ মানুষের পকেটে বেশ বড় আঘাত হানছে। আগে প্রতিপিস আলুর চপ পাওয়া যেত ২-৩ টাকায়, তবে সময়ে সাথে যেন পাল্টেছে যুগ। আর তার সাথে বেড়েছে আলুর চপের দাম।

বর্তমানে সর্বনিম্ন ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আলুর চপ। এদিকে একই অলু দিয়ে তৈরি চপ পাঁচতারকা হোটেলে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে শুরু করে ১০০ বা ১৫০ টাকায়।

এছাড়াও আলুর তৈরি খাদ্য পণ্যের তালিকায় আরো একটি জনপ্রিয় খাবার শিঙাড়া। গরম গরম সিঙারা সাথে এক কাপ চা- বাংলাদেশের খাদ্য সংস্কৃতিতে এই সংমিশ্রণটি যেন এক অমোঘ রীতি। আমাদের জাতীয় ফাস্টফুডের তালিকায়ও এই সিঙারার স্থান সবার উপরে। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে অফিস-আদালত সবখানেই এর জনপ্রিয়তা অত্যাধিক।

তবে বর্তমানে বাজারে আলুর দাম কমলেও কেন বেড়েছে আলুর তৈরি খাদ্য পণ্যের দাম, এই আক্ষেপের শেষ নেই জনমনে!

সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। হিসেব করলে দেখা যায়, একটি ভালো মানের চপ কিংবা শিঙাড়ার দামে প্রায় এক কেজি বা তার অধিক আলু কিনতে পাওয়া যায়। তাছাড়া দাম বাড়লেও দিন দিন ছোট হচ্ছে চপ-শিঙাড়ার সাইজ।

কেন বেড়েছে চপ-সিঙাড়ার দাম?
দোকানদাররা বলছেন, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া এবং অন্যান্য উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এ দাম বৃদ্ধির মূল কারণ। তবে ভোক্তাদের দাবি, দাম বাড়লেও ক্রমশ সাইজ ছোট এবং নিম্নমুখী হচ্ছে চপ-শিঙাড়ার মান।

আরাফাত নামের একজন ভোক্তা চাটগাঁ নিউজকে বলেন, বর্তমানে আলু সস্তা। কিন্তু সস্তা আলু দিয়ে তৈরি শিঙাড়া, আলুর চপের দাম কেন বেশি। তাছাড়া এখন আগের চাইতে ছোট হয়ে গেছে এবং মানও কমে গেছে। তারপরও ক্রেতাদের পকেট কাটছে দোকানিরা।

তিনি জানান, তারা যে শিঙাড়া ও চপ কিনছেন তা স্বাদহীন এবং অস্বাস্থ্যকর। কিছু দোকানে তো পুরোটাই ভেজাল উপকরণ দিয়ে তৈরি হচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

তবে বিক্রেতাদের দাবি, চপ-শিঙাড়া প্রস্তুত করতে যে সকল উপকরণ লাগে, যেমন- আটা, ময়দা, তেল এবং অন্যান্য মসলার দামও বাড়ছে। পাশাপাশি বেড়েছে শ্রমিকদের মজুরিও। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাড়া বৃদ্ধির কারণে দোকান মালিকদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ফলপ্রসূ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আলু দিয়ে তৈরি পণ্যের দাম।

এছাড়াও দোকানিরা জানান, চপ-শিঙাড়া ও অন্যান্য পণ্যের মান বজায় রাখতে এবং ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দোকান মালিকরা প্রায়ই নতুন উপকরণ ব্যবহার করছেন, যা খরচ বাড়াচ্ছে। ফলে, আলুর দাম কম হলেও আলু দিয়ে তৈরি পণ্যের দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না।

এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের খাদ্যাভ্যাসে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কমে যেতে পারে আলু দিয়ে তৈরি খাদ্য পণ্যের চাহিদা-এমনটাই মনে করছে অনেকে।

এছাড়া দাম বেড়ে যাওয়ায় কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যও এই পরিস্থিতি বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। ক্যান্টিনে আলুর তৈরি খাদ্য পণ্যের দাম বাড়ানোর ফলে তারা বিপাকে পড়েছেন।

সবশেষে বলা যায়, আলুর তৈরি খাদ্য পণ্যের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং মানহীনতা ভোক্তাদের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চাটগাঁ নিউজ/এইচএস/এসএ

Scroll to Top