চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : নির্মাণের পর থেকে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের অন্যতম আকর্ষণ আলীকদম-পোয়ামুহুরী সড়ক। পাহাড়ি নদী মাতামুহুরীর পাশ ঘেঁষে নির্মিত এই নয়নাভিরাম সড়কে রয়েছে মোহনীয় সব বাঁক। সাথে যোগ হয়েছে সবুজ পাহাড়ের নৈসর্গিক শোভা। পাহাড়ি এই চ্যালেঞ্জিং পথে আল্ট্রা ম্যারাথন আয়োজন করে দৌড়বিদদের দৌড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে পর্বতারোহণ ক্লাব ‘ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স’।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) ভোরে শুরু হয় এই প্রতিযোগিতা।
‘ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স আল্ট্রাঃ এডিশন ৩’ শীর্ষক এই আয়োজনে ৫২ কি.মি. ও ২৫ কি.মি.– এই দুই ক্যাটাগরিতে অংশ নিয়েছে প্রায় ৪৫০ প্রতিযোগী। প্রতিযোগীরা আলীকদম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে যাত্রা শুরু করে কুরুকপাতা অবধি দৌড়ে ফের শুরুর স্থানে পৌঁছান। সদ্য কৈশোর পেরোনো তরুণদের সাথে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরাও অংশগ্রহণ করেছেন এই প্রতিযোগিতায়।
‘ফর ওয়াইল্ডলাইফ, ফর আর্থ (বন্যপ্রাণির জন্য, পৃথিবীর জন্য)’ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে অনুষ্ঠিত হয় এবারের আয়োজন। দেশের বনাঞ্চলের বিলুপ্তপ্রায় প্রাণিগুলো সংরক্ষণের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরিই ছিল ইভেন্টের অন্যতম উদ্দেশ্য।
প্রসঙ্গত, ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স আয়োজিত আগের দুইটি আয়োজন হয়েছিল অন্য দুটি চ্যালেঞ্জিং রুটে। দেশের সর্বোচ্চ মোটরেবল সড়ক আলীকদম-ডিম পাহাড় সড়কে দৌড়বিদরা দৌড়ানোর সুযোগ পেয়েছেন ২০২৩ সালে। আর গত বছর অংশগ্রহণকারীরা দৌড়েছেন বান্দরবান-চিম্বুক সড়কে। উল্লেখ্য যে এই আয়োজন একটি সম্পূর্ণ দাতব্য উদ্যোগ। এর সকল উদ্বৃত্ত চলে যায় বান্দরবানের কয়েকটি বিদ্যালয়ে আদিবাসী শিশুদের শিক্ষাখাতে।

আল্ট্রা ম্যারাথন তথা ৫২ কি.মি.-এ মো. সাজ্জাদ হোসাইন পুরুষদের ক্যাটাগরিতে, সিফাত ফাহমিদা ইতি নারীদের ক্যাটাগরিতে এবং মো. আমিনুর রহমান জ্যেষ্ঠ ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ২৫ কি.মি.-তে পুরুষদের ক্যাটাগরিতে আবদুল্লাহ আল নোমান, নারীদের ক্যাটাগরিতে সৈয়দা ফাতেমি ওয়ারদা এবং জ্যেষ্ঠ ক্যাটাগরিতে মো. আবদুর রব শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরেছেন।
পোডিয়াম রানাররা ছাড়াও শেষের রেখা ছোঁয়ার আনন্দ ছিল নির্দিষ্ট সময়ে দৌড় শেষ করা দৌড়বিদদের চোখেমুখে। এমন চ্যালেঞ্জিং রুটের কাঠিন্য অতিক্রমের আশাতেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে দৌড়বিদরা এসে জড়ো হন আলীকদমে।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আলীকদম সেনানিবাসের জোন কমান্ডার লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘দেশজুড়ে নানান দূরত্বের দৌড় প্রতিযোগিতাগুলো স্বাস্থ্যসচেতন মানুষদের জন্য নীরব এক বিপ্লবের সূচনা করেছে। আলীকদমের মতো পাহাড়ের একটা উপজেলায় এত দৌড়বিদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে অভূতপূর্ব। দৌড় হোক সকল বয়সি মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্যের একটি সুদৃঢ় মাধ্যম।’
রেস ডিরেক্টর ফরহান জামান বলেন, ‘প্রতি বছর নতুন কোন চ্যালেঞ্জিং রুটে দৌড় আয়োজনের ইচ্ছা থাকে আমাদের ক্লাবের। আল্ট্রা ম্যারাথন যারা পছন্দ করেন, তারা সারা বছরই এই ইভেন্টকে মাথায় রেখে নিজেদেরকে প্রস্তুত করেন। পাহাড়ি পথে নিজেদেরকে সামর্থ্যকে পরখ করে দেখার এই সুযোগ যারা নিয়েছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ। যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমরা নিয়মিত এমন আয়োজন করতে চাই।’
চাটগাঁ নিউজ/এসএ






