সিপ্লাস ডেস্ক: জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সর্বশেষ অনুষ্ঠিত সভায় ৮৪টি প্রকল্প উপস্থাপন করা হলেও প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ততার কারণে ৭৫টি প্রকল্প অনুমোদন পায়। বাকি ৯টি প্রকল্প পরের একনেকে পাস করার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। আগামীকাল বৃহস্পতিবারের একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য তোলা হচ্ছে ৪২টি প্রকল্প।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত চার মাসে প্রায় তিনশোর বেশি প্রকল্পের মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে। যা এত দ্রুত সময়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) যাচাই-বাছাই করে কার্যপত্র তৈরি করে পিইসি সভা করতে হিমশিম খাচ্ছেন পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা। যার কারণে বেশিরভাগ প্রকল্পেই থেকে যাচ্ছে গলদ। কিছু প্রকল্পে অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাব অনুমোদন পাচ্ছে। ফলে তাড়াহুড়ো করে প্রকল্প নিতে গিয়ে সরকারের অর্থের অপচয় হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এসব বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্বে থাকা একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত একনেকে যে প্রকল্পগুলো অনুমোদন হয়েছে তার মধ্যে কয়েকটির সঠিকভাবে পিইসি সভায় হয়নি। কয়েকটি প্রকল্পে যে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছিল সেগুলো মানা হয়নি, তারপরও অনুমোদন পেয়েছে। আবারও কিছু প্রকল্পে নতুন করে অঙ্গ যুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু সেগুলো আর যাচাই-বাছাই করা হয়নি, সেভাবেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে কয়েকটি খাতে বেশি ব্যয় প্রস্তাবও পাওয়া গেছে। জানা গেছে, বৃহস্পতিবারের (৯ নভেম্বর) একনেক সভার জন্য যে প্রকল্পগুলো তোলা হচ্ছে সেগুলোর অধিকাংশেরই পিইসি সভা তাড়াহুড়া করে হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে একনেকের ৬টি বৈঠকে ২০০টির মত প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। যার মধ্যে গত একনেক সভাতেই অনুমোদন পায় ৭৫টি প্রকল্প। আগামী একনেকে অনুমোদন পেতে যাচ্ছে আরও ৪২টি প্রকল্প। বাস্তবতা হলো, সরকার চলমান প্রকল্পগুলোতেই চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দিতে পারছে না, একেকটি প্রকল্প বরাদ্দের অভাবে ঝুলে আছে বছরের পর বছর, তার মধ্যে নতুন করে আরও কয়েক ডজন প্রকল্প অনুমোদন দিচ্ছে সরকার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে যে প্রকল্পগুলো এখন অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে, এগুলো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। দেখা যাবে, আগামী দুই বছরে মন্ত্রণালয়গুলো তেমন বরাদ্দই দিতে পারবে না। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে যাবে। আর মেয়াদ বাড়লে ব্যয় তো বাড়বেই। গত নির্বাচনের আগে যেসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, তার বেশিরভাগই এখনো মাঝপথে।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এক হাজার ৩০৯টি চলমান প্রকল্প রয়েছে। ৮২৫টি প্রকল্প বরাদ্দহীন নতুন প্রকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে। সে তালিকা থেকেই এখন প্রকল্প পাস করা হচ্ছে।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে এত সংখ্যক প্রকল্প অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা অবশ্যই ভোটের রাজনীতি করি। প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। ভোটের সময়ই বেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাবো। এখন পর্যন্ত যত বড় প্রকল্পেরই উদ্বোধন হয়েছে, তা জনগণের কাজে লেগেছে।
একনেকে যেসব প্রকল্প অনুমোদন পাওয়ার অপেক্ষায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ঢাকাস্থ শেরেবাংলা নগর এলাকায় পার্ক নির্মাণ, শেরেবাংলা নগর প্রশাসনিক এলাকায় বহুতল সরকারি অফিস ভবন নির্মাণ, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ১২৩টি ফ্ল্যাট নির্মাণ, চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনরুদ্ধার সম্প্রসারণ সংস্কার ও উন্নয়ন।
এছাড়াও রয়েছে- সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার সংযোগ সড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ; ইলিয়টগঞ্জ-মুরাদনগর-রামচন্দ্রপুর-বাঞ্ছারামপুর জেলা মহাসড়কটি যথাযথভাবে ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ; ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ; গাবতলী সিটিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য বহুতল বিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণ, বর্ধিত ঢাকা পানি সরবরাহ ও রেজিলিয়েন্স প্রকল্প; ঢাকা পানি সরবরাহ উন্নয়ন, ঢাকা স্যানিটেশন উন্নয়ন, বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভিন্ন রাস্তা উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন।
এছাড়া মুগদা মেডিকেল কলেজের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল-৩-এর গ্যাস বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ উন্নয়ন, যশোর রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা, সারাদেশে শহর ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ দ্বিতীয় পর্ব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক মৌলভীবাজার প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ইত্যাদি।