আরও দৃষ্টিনন্দন হচ্ছে আন্দরকিল্লা শাহী মসজিদ
ব্যয় হবে ৩০০ কোটি টাকা

সরোজ আহমেদ : নতুন নকশায় আরও দৃষ্টিনন্দনভাবে পুনর্নির্মিত হচ্ছে আন্দরকিল্লা শাহী মসজিদ চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ। ৩৫৮ বছরের পুরোনো প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার এই মসজিদটির মূল অবয়ব অক্ষুণ্ন রেখে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে আনুমানিক ব্যয় ধরা হবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।

সরকারি ফান্ড থেকে নেওয়া হবে ১১ কোটি টাকা এবং বাকিটা আসবে চট্টগ্রামবাসীর অনুদান থেকে। পুনর্নির্মাণে সময় লাগবে প্রায় তিন বছর।

জানা গেছে, সংস্কারের পর প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। পৃথক স্থান থাকবে ৫০০ মহিলা মুসল্লির। আজ জুমার পর মুসল্লিদের সামনে মসজিদ পুনর্নির্মাণ প্রকল্পে কী কী থাকবে তা উপস্থাপন করা হবে। আগামী রবিবার (১২ অক্টোবর) পুনর্নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। মসজিদটির পুনর্নির্মাণ কাজটি বাস্তবায়ন করছে আর্কিটেক্টচার স্টুডিও এজিই অ্যান্ড ইডিজিই।

সরকার ও চট্টগ্রামবাসীর যৌথ প্রয়াসে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করা হবে জানিয়ে মসজিদের মুসল্লি পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন কাশেম খান বলেন, সাড়ে তিনশত বছরের অধিক পুরাতন মসজিদটির আধুনিকায়ন সময়ের দাবি। ১২ অক্টোবর মসজিদটি পুনর্নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।

মুসল্লি পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক জিয়া হাবীব আহসান বলেন, সরকার ও চট্টগ্রামবাসীর অর্থায়নে অনেকটা মসজিদে নববীর আদলে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একটি আকর্ষণীয় মসজিদ হিসাবে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ইতিহাস
চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লার সাথে মোঘলদের চট্টগ্রাম বিজয়ের কাহিনী সম্পর্কিত। এই কিল্লা বা কেল্লায় মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের আস্তানা ছিলো। ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি শায়েস্তা খাঁ’র ছেলে উমেদ খাঁ এই আন্দরকিল্লার অন্দরে বা ভিতরে প্রবেশ করলে এর নাম হয়ে যায় “আন্দরকিল্লা”। চট্টগ্রাম বিজয়ের স্মৃতি ধরে রাখতে সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে শায়েস্তা খাঁ ১৬৬৭ খ্রিষ্টাব্দে এখানে নির্মাণ করেন “আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ”। নির্মাণের পর থেকেই চট্টগ্রামের ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান হয়ে উঠে আন্দরকিল্লার এই মসজিদ। এই মসজিদের ইমাম/খতিব নিযুক্ত হতেন পবিত্র মদিনার আওলাদে রাসুলগণ। ফলে অল্পদিনের মধ্যেই এই মসজিদ জনপ্রিয় হয়ে পড়ে। বলা বাহুল্য যে, এই জুমা মসজিদে প্রতি জুম্মায় চট্টগ্রাম ও এর আশেপাশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও মুসল্লিরা এসে নামাজ আদায় করেন।

তবে ১৭৬১ খ্রিষ্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, মসজিদটিকে গোলাবারুদ রাখার গুদাম হিসেবে ব্যবহার করতে থাকে।

১৭২৩ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রামের আরেক মোঘল ফৌজদার ইয়াসিন খাঁ, এই জামে মসজিদের কিছুটা দূরে পাহাড়ের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের একটি টিলার উপর আরেকটি পাকা মসজিদ নির্মাণ করে তাতে “কদম রসূল” রাখলে সাধারণের কাছে মসজিদটি গুরুত্ব পেয়ে যায় এবং আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ তুলনামূলক লোকশূন্য হয়ে পড়ে। ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ঐতিহাসিক হামিদুল্লাহ খাঁ’র আবেদনের প্রেক্ষিতে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদটি মুসলমানদের জন্য আবারও উন্মুক্ত হয়।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top