‘আমার হাজবেন্ড কী কোরবানির গরু, কোমরে রশি বেঁধে ঘোরানো হচ্ছে?’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘আমার হাজবেন্ড কী কোরবানির গরু? এভাবে কোমরে রশি বেঁধে গরুর মত এলাকায় এলাকায় নিয়ে যেয়ে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করতেছে ওসি আরিফ। আমার হাজবেন্ডকে এত অপমান না করে উনি কি গুলি করে মারতে পারতেছে না ওসি আরিফ? এটা কি মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে না? আমার হাজবেন্ডকে এভাবে গরুর রশি দিয়ে বেঁধে এলাকায় এলাকায় নিয়ে গিয়ে অপমান করা হচ্ছে।”

কারাবন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে বুড়ির নাতি ছোট সাজ্জাদকে হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে, কোমরে রশি বেঁধে গত দুইদিন ধরে চট্টগ্রামের রাউজান, অক্সিজেন, নয়াহাটসহ কয়েকটি এলাকায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মহড়া চালায় পুলিশ। রিমান্ডে থাকা একজন আসামিকে নিয়ে এমন মহড়া দেয়ার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ চট্টগ্রামে নানা আলোচনার সৃষ্টি করেছে।

ছোট সাজ্জাদকে নিয়ে পুলিশের এমন আচরণে তার স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্না ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। যা রীতিমত ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে তামান্না উপরোক্ত মন্তব্য করেছেন।

ভিডিও বার্তায় তামান্না বলেন, কোন জায়গায় কী নজির আছে? একজন রিমান্ডের আসামিকে এভাবে গরুর মত কোমরে রশি বেঁধে এলাকায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে মাইকিং করতেছে ওসি আরিফ। কেন জিরো টলারেন্সে কী আর কোন ক্রিমিনালের এটাচ করার জন্য জায়গা নাই? নাকি আমার সাজ্জাদকে যেমন ইচ্ছা তেমন করতেছে প্রশাসন।

তিনি আরও বলেন, ‘আসলে ওর কোন ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড নাই? ওর জন্য কথা বলার কেউ নেই তো তাই! আমিও তো মেয়ে মানুষ। আমাকেও দুই-তিনটা মামলা দিয়ে বসে আছে। এখন আমি কি করবো বলেন?’

ফেসবুক বন্ধুদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের উপর ছেড়ে দিছি। আপনাদের কি মনে হয়? এটা কি মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে না? আমার হাজবেন্ডকে এভাবে গরুর রশি দিয়ে বেঁধে এলাকায় এলাকায় নিয়ে গিয়ে অপমান করা হচ্ছে, কেন? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম। আমার হাজবেন্ড যদি অপরাধী হয়। তার বিচার আদালত করবে। ’

ভিডিও বার্তায় ছোট সাজ্জাদকে গ্রেফতারে পুলিশের কৃতিত্ব জাহির নিয়েও তামান্না প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘ওসি আরিফ আমার স্বামীকে গ্রেফতার করে নাই। আমার স্বামীকে এরেস্ট করাইছে সুচি। ওসি আরিফের এখানে কোন সুযোগই নাই। বসুন্ধরা সিটিতে আমরা ঘুরতে গেছি। ওই অবস্থায় আমাদেরকে সুচি দেখছে। দেখার পরে ওখানে সিকিউরিটি গার্ড রুমে নিয়ে যাওয়ার তিনঘন্টা পরে পুলিশ আসছে। আমি এবং আমার স্বামী একসাথে এরেস্ট হই। আমি পরদিন ছুটে আসি। আমার স্বামী যখন ‘তামান্না তামান্না’ বলে চিৎকার করছিল, তখন আমার মোবাইল হারায় গেছিল। তাই আমি পাঁচ মিনিটের জন্য নিচে নেমে আসছিলাম। আমরা একসাথে এরেস্ট হইছি। ওসি আরিফ বা সিএমপির কোন কমিশনার আমাদেরকে এরেস্ট করে নাই। কিন্তু ওরা সিমপ্যাথি নেয়ার জন্য আমার হাজবেন্ডকে রাস্তায় নামায়ে…? আমার হাজবেন্ডকে এত অপমান না করে গুলি করে মারতে পারতেছে না?’

ছোট সাজ্জাদকে নিয়ে পুলিশি মহড়ায় ফেসবুকে সমালোচনা

মনসুর নবী নামে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক তার প্রোফাইলে উল্লেখ করেছেন- ‘আমি আইন কম জানি। পুলিশের নিয়মকানুন এবং ইথিকস সর্ম্পকেও কম জানি। তবে কোনো একটা সভ্য দেশে একজন অপরাধীকে নিয়ে এভাবে রাস্তায় রাস্তায় লোকালয়ে কোমরে দঁড়ি বেঁধে ঘুরিয়ে প্রদর্শন করে মানুষকে সচেতন করার নজির নেই। আপনি যদি মানুষকে সচেতন করতে চান তাহলে থানাগুলো ঠিক করেন। পুলিশকে ঠিক করেন। ঘুষ খাওয়া বন্ধ করেন। থানাকে মানুষ কেন ভয় পায় সেটার কারণ খুজে বের করুন। মানুষের ভয় দূর করেন।’

তিনি লিখেছেন- ‘জুলাইয়ের পর আমি ভেবেছিলাম আমরা সভ্য হওয়ার পথে আছি। কিন্তু তাদের নানা কর্মকাণ্ড দেখে বুঝতেছি আমরা সামনে না পিছনে যাচ্ছি। সাজ্জাদকে নিয়ে এই প্রদর্শনীটা অত্যন্ত কুৎসিত, আনইথিক্যাল এবং বেআইনি। এইসব পপুলিস্ট কাজ করে গণ্ডমূর্খদের বাহবা পাওয়া যাবে, দেশকে সভ্য করা যাবে না।’

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ

Scroll to Top