নিজস্ব প্রতিবেদক : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আমাদের সব চাইতে বড় প্রাপ্তি আমরা এখন মন খুলে কথা বলতে পারি। ৫ আগস্টের আগে বাংলাদেশের কোনো সাংবাদিক এমন লেখার স্বাধীনতা পেয়েছে কিনা আমার সন্দেহ।
আমরা কারো কলম ভেঙ্গে দিইনি, কোনো প্রেসে তালা দিইনি। কোনো গণমাধ্যম যদি তার কর্মীকে চাকরিচ্যুত করে, আপনারা সেই গণমাধ্যম অফিসের সামনে গিয়ে প্রতিবাদ করুন।
শুক্রবার (২ মে) সকাল সাড়ে ১০ টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের জুলাই বিপ্লব স্মৃতি হলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন আয়োজিত ‘জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশ গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন। ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
এ সময় শফিকুল আলম বলেন, মানুষ এখন ভিডিও দেখেন বেশি, নিউজ কম পড়েন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে। বিদেশি মিডিয়া ও আওয়ামীলীগ অপতথ্য ছড়িয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
এছাড়াও তিনি বলেন— জাতিসংঘকে অনুরোধ করা হবে- বিশেষজ্ঞ একটি প্যানেল করে গত ১৫ বছরের তিন নির্বাচনসহ দেশের সব বড় বড় ঘটনাগুলোতে কেমন সাংবাদিকতা হয়েছে, সাংবাদিকদের ভূমিকা কেমন ছিল, তা অনুসন্ধান করে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে।
‘জাতিসংঘ জুলাই গণহত্যা নিয়ে একটি চমৎকার প্রতিবেদন দিয়েছে। সেখানে আওয়ামীলীগের নেতা, মন্ত্রীকে কোথায়, কোন ভূমিকা রেখেছে, সেগুলো উল্লেখ করা আছে। এরকম একটি প্রতিবেদন যেন গত ১৫ বছরের সাংবাদিকতা নিয়ে করা হয়, সে বিষয় জাতিসংঘ সহায়তার জন্য লিখব।
নির্বাচন নিয়ে প্রেস সচিব বলেন, সামনে নির্বাচন। আমাদের গণমাধ্যমকে এর জন্য প্রস্তুত হতে হবে। এটি শুধু সরকারের একার দায়িত্ব নয়। প্রত্যেকটি পত্রিকার ফ্যাক্ট চেকিং সেল থাকা দরকার। এটি পোস্ট রেভ্যুলেশনারী চ্যালেঞ্জ।
প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, বিগত দিনে সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে। আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছিল কিছু মানুষকে নিরাপত্তা দিতে। কিন্তু বিগত সরকার সাংবাদিকদের হাত-পা বাঁধতে এই আইন ব্যবহার করেছিল। অন্তর্বর্তী সরকার মুক্ত সাংবাদিকতায় বদ্ধপরিকর, এই আইন বাতিল হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার যে কোনো ক্ষমতাশালীর হস্তক্ষেপ রোধে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এই কমিশন ইতোমধ্যে তাদের প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে। সরকার কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকরা আরও বেশী স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
বিএফইউজে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর রাষ্ট্রকাঠামোয় যে পরিবর্তন হয়েছে তার সঙ্গে অনেকেই এখনো খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি। যে কোনো বিপ্লবের পর পরাজিত শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে কমপক্ষে ২০ বছর সময় নেয়। কিন্তু আমাদের এখানে ফ্যাসিবাদ পতনের বছর না গড়াতেই তাদের সহযোগী শক্তিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে। চট্টগ্রামে মিছিল করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় না হলেও নীরবতায় তারা এই সাহস পেয়েছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই।
বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারত থেকে যখন দেশে ফিরেছিলেন তখন সংবাদ সম্মেলনে যা ঘটেছিল তা ইতিহাসের নিকৃষ্টতম দালালী। এরচেয়ে নিকৃষ্টতম দলদাশগিরি আর হতে পারে না। প্রশ্ন করার কথা ছিল যেসব চুক্তি হয়েছে তা নিয়ে। কিন্তু আমরা দেখলাম বলা হচ্ছে হাসিনা আন্তর্জাতিক নেত্রী। তার নোবেল পাওয়া উচিত। ভবিষ্যতে কেউ যাতে গণমাধ্যমকে এমন নিচুস্তরে নামাতে না পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আংশিক সত্য কখনো সাংবাদিকতা নয়। পুরোপুরি সত্যটাই সংবাদ, সাংবাদিকতা। সঠিক তথ্যেই সাংবাদিকতা করতে হবে। সাংবাদিকতা রোধে ৩২টি আইন আছে। কিন্তু সাংবাদিক সুরক্ষায় কোনো আইন নেই। সাংবাদিকদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন করতে হবে।
সিএমইউজে সেক্রেটারি সালেহ নোমান ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্য গোলাম মাওলা মুরাদের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহনওয়াজ, কমনওয়েলথ জার্নালিস্টস এসোসিয়েশনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সেক্রেটারি ও পিপলস ভিউ সম্পাদক ওসমান গণি মনসুর, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নছরুল কদির, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ডা. খুরশীদ জামিল, এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি প্রকৌশলী জানে আলম সেলিম, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুস সাত্তার, চট্টগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহীদুল হক, বাসসের বিশেষ প্রতিনিধি মিয়া মোহাম্মদ আরিফ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম সদস্য সচিব রিজাউর রহমান, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য নীলা আফরোজ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রিজোয়ান সিদ্দিকী, চৌধুরী সিয়াম এলাহী প্রমুখ।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড প্রেস কাউন্সিলের সাবেক সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈন উদ্দিন কাদেরী শওকত, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, মহানগর পিপি মফিজুল হক ভূঁইয়া, আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারি হাসান আলী, এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম ও চট্টগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দ।
চাটগাঁ নিউজ/এইচএস/এমকেএন/জেএইচ