সিপ্লাস ডেস্ক: নভেম্বরের প্রথম দিন থেকে চিনির বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক অর্ধেক কমানো হয়েছে। কিন্তু ১৩ দিনেও বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি, বরং এর মধ্যে দুই দফা দাম বেড়েছে।
খুচরা বাজারে এখন প্রতি কেজি চিনি ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাড়া-মহল্লার কোনো কোনো দোকানে ১৫০ টাকাও বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) ঢাকার খুচরা বাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এসব বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা এবং খোলা চিনি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেখানে শুল্ক ছাড়ের আগে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে ছিল।
এবার অপরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি টনে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া কাস্টমস শুল্ক আগে ছিল ৩ হাজার টাকা। আর অন্যান্য চিনির শুল্ক ছিল ৬ হাজার টাকা। বর্তমানে চিনি আমদানিকারকদের ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক ও ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ছাড়াও প্রতি টন চিনিতে নির্দিষ্ট ৩ হাজার টাকা কর দিতে হয়। সেটা কমিয়ে এবার ১ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে প্রতি কেজি চিনি ভোক্তার হাতে যাওয়া পর্যন্ত মোট কর আরোপিত হয় ৬০ শতাংশের ওপর, টাকার অঙ্কে যা ৪০ থেকে ৪২ টাকা। এখন শুল্ক কমানোর পর আমদানি পর্যায়ে অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনির সামগ্রিক আমদানি ব্যয় যথাক্রমে প্রতি টনে সাড়ে ৬ হাজার টাকা ও ৯ হাজার টাকা কমে যাওয়ার কথা।
তারপরও চিনির দাম কমার লক্ষণ নেই। বরং পাইকারি বাজারে চিনির দাম প্রতি মণে বেড়েছে ১৩০ টাকা বা ৩ শতাংশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারি বাজারের প্রতি মণ চিনি (৩৭ দশমিক ৩২ কিলোগ্রাম) ৪ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৩ হাজার ৯৫০ টাকা।
এদিকে খুচরা বাজারে এখনো পর্যাপ্ত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক দোকানেই খোলা চিনি নেই। আবার কোথাও খোলা চিনি আছে, প্যাকেট নেই। কোথাও আবার দেশি চিনিকলের চিনি পাওয়া যাচ্ছে, যার দাম ১৭০ টাকা।
এদিকে বাজারে প্যাকেটজাত চিনি না থাকায় অনেক ব্যবসায়ী খোলা চিনি নিজেরাই প্যাকেট করে বিক্রি করছেন। সেগুলোর দাম রাখা হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।
মালিবাগ বাজারের প্রায় ১২টি মুদি দোকানে চিনি বিক্রি হয়। সকালে মাত্র তিনটি দোকানে চিনি পাওয়া যায়। তাদের কেউ বিক্রি করছেন ১৪৫ টাকা আবার কেউ বিক্রি করছেন ১৫০ টাকার মধ্যে।
সেখানে গাজী স্টোরে খোলা চিনি ১৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। দোকানি এনামুলের কাছে শুল্ক ছাড়ের পরে দাম কেন বাড়ছে জানতে চাইলেতিনি বলেন, ‘কোন জায়গায় শুল্ক কমেছে? আমরা তো কিছু জানি না। আমরা চিনি পাচ্ছি না, এটাই জানি। আর দাম বাড়ছে বলে শুধু রেগুলার কাস্টমারের জন্য চিনি রাখছি।’
তিনি বলেন, ‘পাইকারি বাজারে গত এক সপ্তাহে প্রতি কেজি চিনির দাম প্রায় ৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।’
শুভ স্টোরের কালাম হোসেন বলেন, ‘আগে যারা খোলা চিনি কিনে রেখেছিলেন, তারা এখন তা ১৪৫ টাকায় বিক্রি করতে পারছেন। তবে যেসব বিক্রেতা গত দু-এক দিনের মধ্যে পাইকারি বাজার থেকে চিনি কিনেছেন, তারা খুচরায় চিনি বিক্রি করছেন কেজি ১৫০ টাকা।’
খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, পাইকারি বাজার থেকে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) খোলা চিনি কিনতে হচ্ছে ৬ হাজার ৯০০ থেকে ৭ হাজার টাকায়। ফলে খোলা চিনির পাইকারি দামই পড়ছে কেজি ১৩৮ থেকে ১৪০ টাকা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী ভুট্টো গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মিল থেকে ঠিকমতো চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। পাইকারি বাজারে চিনির সরবরাহ কমার ফলে খুচরায় দাম বেড়েছে।’