আবারও উত্তাল রাউজান— দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত অনেকে
হাসপাতালে ভর্তি গোলাম আকবর খোন্দকার

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় আবারও দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারসহ আহত অন্তত ২০। এছাড়া ভাংচুর করা হয়েছে তাকে বহন করা গাড়ি এবং আগুন দেয়া হয়েছে তার কর্মী সমর্থকদের মোটরসাইকেলে।

আজ মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিকাল ৪টার দিকে রাউজান পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের সাত্তারঘাট নামক এলাকায় চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কের ওপর এই হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান— প্রয়াত সাবেক ‍রাউজান উপজেলা বিএনপির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমদের কবর জেয়ারত করতে গাড়িবহর নিয়ে যাচ্ছিলেন গোলাম আকবর খোন্দকারসহ তার অনুসারীরা। একই দিন আগামী ৯ আগস্ট সমাবেশের প্রস্তুতি হিসেবে পূর্বনির্ধারিত মোটরসাইকেল শোভাযাত্রার কর্মসূচি ছিল গিয়াস উদ্দিন কাদেরের অনুসারীদের। গোলাম আকবর তার বহর নিয়ে সাত্তারঘাট এলাকায় পৌঁছালে সেখানে অবস্থান নেওয়া গিয়াস উদ্দিন কাদেরের অনুসারীদের মুখোমুখি হন। ওই সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। শুরু হয় উভয় পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে।

এতে গোলাম আকবর খোন্দকার গুরুতর আহত হলে তাকে তাৎক্ষণিক চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া উভয় পক্ষের অন্তত শতাধিক কর্মী সমর্থক আহত হয়েছে বলেও জানা গেছে।

আহত যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন— রাউজান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাসিম উদ্দিন চৌধুরী, গোলাম আকবর খোন্দকারের ব্যক্তিগত সহকারী অর্জুন কুমার নাথ ও এপিএস আসিকুর রহমান, যুবদল নেতা সাজ্জাদ হোসেন,  বিএনপি নেতা আওরঙ্গজেব সম্রাট, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি নাঈম উদ্দিন মিনহাজ, মোহাম্মদ হুমায়ুন।

হামলার বিষয়টি নিয়ে গোলাম আকবর খোন্দকার তাৎক্ষণিক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা প্রয়াত বিএনপি নেতা মহিউদ্দিন আহমদের কবর জিয়ারত করতে যাচ্ছিলাম। গিয়াস উদ্দিন কাদেরের অনুসারীরা গহিরায় সড়ক বন্ধ করে রাখে। আমরা যখন রাউজান সাত্তারঘাট এলাকায় যায় তখন তারা আমাদের ওপর এলোপাতারি হামলা শুরু করে। পরে তারা গুলি করা শুরু করলে আমার ঘাড়ে ছররা গুলির আঘাত লাগে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগেই জানানো হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন— আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানালাম, তারা আমাকে কনফার্ম করলো, কোনো অসুবিধা নেই, আমরা আছি। তারপর আমরা আসছি। কিন্তু আমরা যখন সত্তরঘাট ব্রিজ ক্রস করলাম; তখন ৫০-৬০ জন লোক ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করল। লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করল।

গোলাম আকবরের দাবি— বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর নির্দেশে তাদের ওপর এই হামলা। এতে তার ব্যক্তিগত সহকারীসহ অন্তত ১৫ জন অনুসারী আহত হয়েছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী অবশ্য বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সপ্তাহখানেক ধরে অসুস্থ। ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানি না। আমি খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবো।

তিনি দাবি করেন— আজ (মঙ্গলবার) রাউজানে তার কোনো প্রোগ্রাম ছিল না।

তবে গিয়াস উদ্দিনের অনুসারী রাউজান উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ আহমেদ বলেন— জুলাই-আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপনকে ভন্ডুল করতে আজকের এ পরিকল্পিত হামলা। যুবদলের শান্তিপূর্ণ মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় এলোপাতাড়ি গুলি করে ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা। ফটিকছড়ি থেকে সন্ত্রাসী এনে গোলাম আকবরের লোকজন এই হামলা চালান।

এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে— গোলাম আকবরের গাড়িটি ভাঙাচোড়া অবস্থায় রাস্তার উপর পড়ে আছে তার ঠিক নিচে শ্রদ্ধা জানানোর ফুল পড়ে আছে। রাস্তার একপাশে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে ধাউ ধাউ করে জ্বলছে আগুন । রাস্তার প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইটপাটকেল আর গুলির খোসা। এছাড়া হামলাস্থলে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

পরিদর্শনকালে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, এক পক্ষ কবর জিয়ারত করতে যাচ্ছিলেন আরেক পক্ষের শোভাযাত্রায় ছিল। সাত্তারঘাট এলাকায় গোলাম আকবর খোন্দকার তার অনুসারীদের গাড়িবহর নিয়ে যাওয়ার সময় দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে তাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শুরুতে কিছুটা সময় যান চলাচল বন্ধ থাকলেও পরে স্বাভাবিক হয়।

উল্লেখ্য, রাউজানে গত বছরের ৫ আগস্টের পর সহিংসতায় মোট ১৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ১০টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয় অন্তত শতাধিকবার। তিন শতাধিক মানুষ এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুরো রাউজান উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top