নিজস্ব প্রতিবেদক: উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোকে বিভিন্ন সময় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করতে হয়। তবে রাস্তা খুঁড়তে গিয়ে তারা প্রায় সময় ওয়াসার পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলছে। ক্ষতিগ্রস্ত সঞ্চালন লাইন মেরামত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ওয়াসাকে। আবার মেরামত চলাকালীন সরবরাহ বন্ধের কারণে পানি না পেয়ে কষ্ট পাচ্ছে নগরবাসী। এদিকে বিক্ষুব্ধ গ্রাহকদের ক্ষোভ, চাপ গিয়ে পড়ছে ওয়াসার ওপর।
তবে এ সমস্যা সমাধানে এবার পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্তকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
ওয়াসার কর্মকর্তাদের অভিযোগ, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো সাব কন্ট্রাক্ট ঠিকাদার দিয়ে কাজ চালাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আবার সাব কন্ট্রাক্ট ঠিকাদাররা কাজ করাচ্ছেন থার্ডপার্টি দিয়ে। এসব কাজে নিয়োজিত অধিকাংশ শ্রমিক অদক্ষ, অযোগ্য। রাস্তা খননের আগে সংশ্লিষ্টদেরকে ওয়াসার পক্ষ থেকে পাইপ লাইনের অবস্থান ও নকশা দেয়া হয়। আবার খননের সময় ওয়াসার প্রকৌশলীরা গিয়েও পাইপের বাস্তব অবস্থান চিহ্নিত করে দিয়ে আসেন। তারপরও তারা পাইপ ফুটো করে ফেলছে।
নগরের চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের ক্ষোভের সুরে বলেন, ওয়াসা, সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন, বিদ্যুৎ- একটি সংস্থার সাথে আরেকটি সংস্থার কোনো সমন্বয় নেই। ওয়াসার লাইন কেটে ফেলছে সিডিএ, বিদ্যুতের লোকজন। ওয়াসার খবর নেই। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। ভুগতে হচ্ছে আমরা নগরবাসীকে।
তিনি আরও বলেন, আমার রেসিডেন্সিয়াল মিটার। কিন্তু আমাকে কমার্শিয়াল করা হয়েছে। রেসিডেন্সিয়ালের প্রতি ইউনিট পানির দাম ১৩ টাকা। আর কমার্শিয়ালে প্রতি ইউনিট পানির দাম ৩৭ টাকা। ওয়াসার লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলে আরও উল্টো ঝাড়ি খেতে হয়। রমজানে নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহের কথা ওয়াসার। কিন্তু রমজান আসার পর থেকে পানিই পাচ্ছি না। রান্নাবান্না, গোসল, ওজু ঠিকমত করতে পারছি না। পানি কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে। এভাবে তো আর চলতে পারে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরীর অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়ক এলাকায় ‘জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের একটি কালভার্ট নির্মাণের সময় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এক্সেভেটরের আঘাতে ওয়াসার মূল সঞ্চালন পাইপটি ফুটো হয়ে যায়। ১ হাজার ২০০ মিলিমিটার ব্যাসের মূল সঞ্চালন পাইপে ৮-১০ ইঞ্চির ফুটো হয়ে যায়। এতে করে কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ থেকে পানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ওয়াসার অভিযোগ, সাব কন্ট্রাক্ট ঠিকাদার দিয়ে কাজ চলাকালীন অদক্ষ কর্মীদের কারণে এক্সেভেটরের আঘাতে পাইপ লাইনটি ফেটে গেছে।
৪৮ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ লাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নগরীর উত্তর ও দক্ষিণ হালিশহর, আগ্রাবাদ, নয়া বাজার, মাদারবাড়ি, দেওয়ানহাট, ধনিয়ালাপাড়া, লালখান বাজার, ওয়াসার মোড়, জিইসি মোড়, ২ নম্বর গেট, বায়েজিদ বোস্তামি, নাসিরাবাদ, অক্সিজেন, মুরাদপুর, কদমতলী, আনন্দবাজার, রৌফাবাদ, রুবি গেট, হিলভিউ আবাসিক, মোমেনবাগ, বহদ্দারহাট, কুয়াইশ, নন্দনকানন, জামালখান, সিরাজউদ্দৌলা রোড, চকবাজার, আন্দরকিল্লা সংলগ্ন এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। প্রায় ছয়দিন প্রচেষ্টার পর ওয়াসা পাইপের ছিদ্র সারাতে সক্ষম হয়।
গত ৮ মার্চ শনিবার রাতে সাগরিকা এলাকায় পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ভূগর্ভস্থ কেবল বসানোর কাজের সময় ৪৪ ইঞ্চি ব্যাসের পানি সরবরাহ লাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
১১০০ মিলিমিটার ব্যাসের প্রধান সঞ্চালন লাইনের পাইপটি ফুটো হয়ে যাওয়ায় অন্তত ১৮ এলাকায় ওয়াসার পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত এই সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে হালিশহর এলিভেটেট ট্যাংক রোড হয়ে আগ্রাবাদ বা/এ, সিডিএ আ/এ, পশ্চিম মাদারবাড়ি, হালিশহর, বড়পুল, ছোটপুল, বেপারিপাড়া, গোসাইলডাঙ্গা, পানওয়ালাপাড়া, পোস্তারপাড়, ধনিওয়ালাপাড়া, কদমতলী, হাজিপাড়া, শান্তিবাগ, মুহুরিপাড়া, পাহাড়তলী, ঈদগাঁ, দেওয়ানহাটসহ তৎসংলগ্ন এলাকায় পানি সরবরাহ করা হত।
তিনদিন পর মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাত ৪টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত পাইপের মেরামত কাজ শেষ হয়। বুধবার (১২ মার্চ) ভোর ৫টা থেকে পানি সরবরাহ শুরু করেছে ওয়াসা।
আরও জানা যায়, চলতি বছর গত ১৮ জানুয়ারি হাটহাজারী নজুমিয়া হাট শেখ মার্কেট এলাকায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বেপরোয়া গতির একটি প্রাইভেট কার উল্টে ওয়াসার কর্ণফুলী পানি শোধনাগার প্রকল্পের পাইপের ওপর পড়ে। এতে ওয়াসার পাইপের ভাল্ব ফেটে যায়৷ ভাল্ব ফেটে যাওয়ায় পাইপ থেকে প্রায় ৪০ ফুট উচ্চতার গতিতে পানি বের হতে থাকে। প্রায় ৮ ঘন্টার নিরন্তর প্রচেষ্টার পর ওয়াসা পাইপটি সারালে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম চাটগাঁ নিউজকে বলেন, বিভিন্ন প্রকল্প কাজ করার সময় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে ওয়াসার পাইপলাইন কাটা পড়ছে। আমরা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষকে আমাদের ম্যাপ, লাইনের অবস্থান, ডিজাইনসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু পাঠিয়েছি। এমনকি কাজ শুরুর আগে আমাদের প্রকৌশলীরা গিয়ে কাজ বুঝিয়ে আসেন। তারপরও দেখা যাচ্ছে নানাভাবে পাইপলাইন কাটা পড়ছে। এদিকে লাইন কাটা পড়লে আমাদেরকেই তা সারাতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, পানি বন্ধ হয়ে গেলে সব প্রেসার ওয়াসার উপর এসে পড়ছে। কিন্তু আমাদের দোষে এটি হচ্ছে না। অথচ কষ্ট পাচ্ছি আমরা। কষ্ট পাচ্ছে গ্রাহকরা। এবার আমরা এ নিয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের চিন্তা ভাবনা করছি। প্রয়োজনে মামলাও দায়ের করা হতে পারে। এ ব্যাপারে দ্রুত সময়ে একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ