চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: নতুন দিনে শিক্ষার্থীর হাতে শতভাগ নতুন বই না পৌঁছার নেপথ্যে আটটি কারণকে চিহ্নিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ আটটি কারণে এবার বিলম্বিত হয়েছে সরকারের বই বিতরণ কার্যক্রম। এর ফলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া, পরীক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কার্যক্রমও বিলম্বিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর ফলে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে সরকারের বই উৎসব।
তবে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ মনে করছেন বিলম্বিত হলেও এবার নিরপেক্ষ, গুণগত মানসম্পন্ন, সমালোচনা বিহীন বই হাতে পাবে শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১ জানুয়ারি) রাজধানী ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন ও মোড়ক উন্মোচন’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, এবারের বইগুলো আগের চেয়ে সুন্দর ঝকঝকে , ভালো মলাটের বই হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের হাতে এখনই বই পৌঁছাতে না পেরে আমি কোমলমতি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের প্রতি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে কেন এমনটা হয়েছে তার কারণগুলোও বলা দরকার।
তাঁর মতে, প্রথম কারণ হলো- আমরা বিদেশে বই ছাপাবো না। দেশেই বই ছাপানো হচ্ছে।
দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে- অনিবার্য কারণে শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে।
তৃতীয় কারণ হচ্ছে- শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের কারণে বইয়ের সংখ্যা বেড়ে গেছে। বইয়ের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া ছাপাতে বেশি সময় লেগে যাচ্ছে।
চতুর্থ কারণ – নানামুখী প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে দেরিতে বই ছাপা শুরু করতে হয়েছে। শিশুদের কাছে বই যাবে, সেটা ভালো কাগজে ছাপা না হলে তো হয় না। সেজন্য উন্নতমানের ছাপা, উন্নত মানের কাগজ ও মলাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পঞ্চম কারণ– পুরো কার্যক্রম চলাকালীন গোপনীয়তা ও প্রাইভেসি রক্ষা করা হয়েছে। আমাদের বই ছাপানোর কাজ বাদ দিয়ে যাতে নোট বইয়ের ছাপার কাজ না চলে, সে বিষয় তদারকির জন্য ঢাকার শিক্ষকদের পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার টিমের মাধ্যমেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
ষষ্ঠ কারণ– শিক্ষাক্রমের অনেকগুলো বই পরিমার্জন ও সংশোধন করতে হয়েছে। রাজনীতিতে নিরপেক্ষ বলে কিছু থাকে না, দলীয় রাজনীতি নিরপেক্ষ সবকিছু যেন বইয়ে থাকে, এবার সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে।
সপ্তম কারণ- এনসিটিবিতে আগে যারা কাজ করেছেন, তাদের অনেককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাদের বসানো হয়েছে, তারা অনভিজ্ঞ। কিন্তু মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাথে তাদের বোঝাপড়া হতেও সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এটা তাদের অভিজ্ঞতায় নেই। সেটা করতে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমাকেও এর মধ্যে ঢুকতে হয়েছে।
অষ্টম কারণ হলো- পদে পদে ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন, বই ছাপানো বিলম্বিত হওয়ায় পদে পদে ষড়যন্ত্র ছিল। এসব মোকাবেলা করে আমাদেরকে কাজ চালাতে হয়েছে। আজও কোনও কোনও জেলায় ষড়যন্ত্র করে বই আটকিয়ে রাখা হয়েছিল।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, বই ছাপানোর কাজে নিয়োজিত প্রেসের মালিক, কাগজ উৎপাদনকারী সংস্থা বর্তমানের কম মূল্যে কাগজ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। তাদেরকে আমি ধন্যবাদ জানাই।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীম। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বিলকিস জাহান রিমি, এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
চাটগাঁ নিউজ/ ইউডি
