চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: শীতের রিক্ততা মুছে প্রকৃতিজুড়ে সাজ সাজ রব। বিবর্ণ প্রকৃতিতে জেগে উঠেছে নতুন প্রাণ। আজ পয়লা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। কবির ভাষায়- ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক, আজ বসন্ত।’ ফাল্গুনের হাওয়ায় দোল লেগেছে প্রকৃতিতে। নতুনরূপে সেজেছে ঋতুরাজ। হিমেল পরশে বিবর্ণ ধরায় জাগছে নবীন জীবনের প্রাণের উল্লাস। দখিনা হাওয়া, মৌমাছিদের গুঞ্জরণ, কচি-কিশলয় আর কোকিলের কুহুতানে জেগে ওঠার দিন আজ। একই দিনে (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হচ্ছে ভালোবাসার দিন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। আজ বসন্ত আজ ভালোবাসার দিন। কোকিলের কুহুতানে জাগা মুখরিত বাংলার বিস্তীর্ণ প্রান্তরে আজ পহেলা ফাগুনের দিনে হবে ভালোবাসার জয়গান। হৃদয় থেকে হৃদয়ের কথাগুলো আজ ভাষা পাবে।
ভালোবাসা দিবস আর বসন্তের রঙ যেন মিলেমিশে এক হচ্ছে আজ। ফাল্গুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। সেই সঙ্গে ঋতুরাজের হাত ধরে এবারও এলো ভালোবাসার বিশেষ দিনটি। একদিকে বাসন্তী রঙ, অন্যদিকে ভালোবাসার রঙের জোয়ারে প্রকৃতি একাকার আজ। নীল আকাশে সোনা ঝরা আলোকের মতোই আজ হৃদয় আপ্লুত প্রাণভরা ভালোবাসায়।
বেশ কয়েক বছর ধরে ঋতুরাজের হাত ধরে আসছে ভালোবাসার দিন। যদিও ভালোবাসা ক্ষণিকের নয়, চিরন্তন। ভালোবাসা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার নয়, শুধু স্বামী-স্ত্রীর নয়, এ ভালোবাসা বয়সের ফ্রেমে বাঁধা নয়, এটা প্রসারিত হয় বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজনসহ সবার মাঝে। ইংরেজি বর্ষপঞ্জির ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে পরিচিত সারা বিশ্বে। বাংলাদেশেও দিবসটি ঘিরে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে।
বসন্ত মানে নতুন প্রাণের কলরব। গাছে গাছে নতুন পাতা, ডালে ডালে কোকিলের ডাক। রঙিন ফুলে সুশোভিত হয়ে ওঠে প্রকৃতি। বাতাসে ছড়ায় ফুলের রেণু, প্রকৃতি হয়ে ওঠে অপরূপ। বসন্ত শুধু প্রকৃতির নবজীবন নয়, এটি ভালোবাসারও প্রতীক। প্রেমিক-প্রেমিকা থেকে শুরু করে বন্ধু-বান্ধব, পরিবার—সবাই আজ ভালোবাসার উষ্ণতা ভাগ করে নিচ্ছেন। প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো, ফুল উপহার দেওয়া ও একান্ত মুহূর্তগুলো উপভোগ করার দিন আজ। ফাগুনের আগুনে রাঙানো হৃদয়ে ভালোবাসার আবেশ ছড়িয়ে দিয়ে এভাবেই উদযাপিত হচ্ছে বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের আনন্দ।
ইট, কাঠ, কাচ আর ইস্পাতের নগরেও আজ অনেকে বাসন্তী সাজ আর ভালোবাসার ফুলে ছড়িয়ে দেবে প্রাণের উচ্ছ্বাস। হৃদয়ে বসন্তের উষ্ণতা নিয়ে আজ বাইরে পা দেবেন অনেকে। প্রিয়জনকে নিয়ে ভালোবাসার দিগন্ত ছুঁতে চাইবেন তাঁরা। একটি দিন প্রিয় মানুষের সঙ্গে একান্তে নিজেদের মতো করে কাটাবেন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম দিনটিকে বেছে নেবে প্রিয় মানুষের কাছে একান্ত কিছু কথা বলার জন্য।
গোলাপের গুচ্ছ নিয়ে একসঙ্গে বাইরে ঘুরে বেড়ানো, কোথাও খেতে যাওয়ার মধ্য দিয়ে দিনটি কাটবে অনেকের। কারো হয়তো প্রেমের প্রথম কুঁড়িটি লাজুক চোখ মেলে তাকাবে বসন্তের প্রথম দিনের আলোয়। আজ ঘরে-বাইরে শোনা যাবে অনুপম রায়ের লেখা জনপ্রিয় গানটির কলি—‘বাতাসে বহিছে প্রেম/নয়নে লাগিল নেশা/কারা যে ডাকিল পিছে/বসন্ত এসে গেছে।’
বরাবরের মতো রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ বসন্ত উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বাসন্তী রঙে সেজে তরুণ-তরুণীরা ভিড় জমিয়েছেন উৎসবস্থলে। নাচ-গান, আবৃত্তি আর সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় মুখর হয়ে উঠেছে চারপাশ।
বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বসন্তকথন পর্বও অনুষ্ঠিত হয়েছে। আয়োজনে সভাপতিত্ব করেছেন স্থপতি সফিউদ্দিন আহমদ, বক্তব্য দিয়েছেন সহসভাপতি কাজল দেবনাথ ও সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইটসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ।
তবে, এবার পবিত্র শবেবরাতের কারণে উৎসবের সময়সীমা কিছুটা সংক্ষিপ্ত রাখা হয়েছে। সকাল সাড়ে ১১টায় প্রাণ-প্রকৃতির গান, কবিতা ও ঐতিহ্যবাহী নাচের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে চারুকলার আয়োজন।
প্রতিবছর শিল্পকলা একাডেমিতে বসন্ত উৎসব উদযাপন করা হলেও এবার কোনো আয়োজন রাখা হয়নি বলে জানিয়েছেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ।
চাটগাঁ নিউজ/এমকেএন