চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: এ কে এম নাজিম উদ্দিন বিএসসি ছিলেন এক নিভৃতচারী সমাজহিতৈষী, যিনি সারাজীবন সমাজের পিছিয়ে পড়া ও প্রান্তিক মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। ভোগের চেয়ে ত্যাগেই তিনি শান্তি ও পরিতৃপ্তি খুঁজে পেতেন—এটাই ছিল তাঁর জীবনের মূল দর্শন।
আজ ৯ ডিসেম্বর তাঁর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৫১ সালের ২৯ মার্চ তিনি জন্মগ্রহণ করেন তৎকালীন পটিয়া থানার (বর্তমানে চন্দনাইশ উপজেলা) বরকল ইউনিয়নের পূর্ব কানাই মাদারী গ্রামে। ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম শহরের চকবাজারস্থ নিজ বাসায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৬৪ বছর। পিতা মরহুম কামাল উদ্দিন আহমদ মাস্টার এবং মাতা মরহুমা আনোয়ারা বেগম—সন্তানদের মাঝে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।
শিক্ষাজীবনে তিনি কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও এইচএসসি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি চন্দনাইশ উপজেলার বরমা ইউনিয়নের কেশুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯২ সালে তিনি নির্বাচিত হন চন্দনাইশ উপজেলার ১৯নং (বর্তমান ৪নং) বরকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে। পরপর পাঁচ বছর তিনি সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সময়কালে বরকল ইউনিয়ন পরিষদে সুশাসন, জনগণের কল্যাণ এবং অবকাঠামো উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটে। সমাজকল্যাণে নিবেদিত মানুষ হিসেবে তিনি স্থানীয়ভাবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন।
শিক্ষা ও সমাজসেবায় তাঁর অবদান ছিল বহুমুখী। তিনি পূর্ব কানাইমাদারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি, দেশমাতৃকা সোসাইটির পরিচালক ও চেয়ারম্যানসহ বহু স্কুল, মাদরাসা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন।
ব্যক্তিজীবনে তিনি বোয়ালখালী উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারের কন্যা শেখ লুৎফুন নেসাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেন। তাঁদের পরিবারে তিন পুত্র ও তিন কন্যা।
জ্যেষ্ঠপুত্র মোস্তফা কামাল নিজামী চাটগাঁর সংবাদ পত্রিকার সাব-এডিটর ও শিক্ষানবিশ আইনজীবী। দ্বিতীয় পুত্র দ্বীনিয়াত কামাল নিজামী নোয়াখালীর সেনবাগ সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক। তৃতীয় পুত্র সানিয়াত কামাল নিজামী বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন এবং বর্তমানে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত।
পিতার স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে দ্বিতীয় পুত্র প্রভাষক দ্বীনিয়াত কামাল নিজামী বলেন, “আমাদের বাবা ছিলেন অত্যন্ত সহজ-সরল ও নিরহংকারী মানুষ। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রতি তাঁর ছিল অগাধ মমতা। তিনি সবসময় গরিব–দুঃখীদের পাশে থাকতে চাইতেন। ধনীদের আড়ম্বরের চেয়ে সাধারণ মানুষের হাসি–কান্না তাঁর কাছে ছিল বেশি মূল্যবান।”
চাটগাঁ নিউজ/এমকেএন






