আগামী নভেম্বরে গণভোট চায় জামায়াত

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: জাতীয় নির্বাচনের আগে নভেম্বরে গণভোট আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক বৈঠক শেষে এ কথা জানান জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।

এদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনসহ অন্যান্য কমিশনারদের সঙ্গে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করে জামায়াত।

বৈঠক শেষে আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘আমরা আলোচনা করেছি পিআর ও ট্রেডিশনাল পদ্ধতি নিয়ে। আগে শুধু ট্রেডিশনাল পদ্ধতি ছিল, কিন্তু গত ৫৪ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ট্রেডিশনাল পদ্ধতি নির্বাচনকে সুস্থ রাখতে পারেনি। আমরা বলেছি সিস্টেম হলে কেন্দ্র দখল, রাতের ভোট, এসব কমে যাবে। দু’টি পদ্ধতিই বিবেচনায় নেওয়া উচিত।’

‎জামায়াতের নায়েবে আমির জানান, সরকার সিদ্ধান্ত নিলে ইসি সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করতে পারবে বলে আশ্বস্ত করেছে।

তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে দুই মত আছে। একদল চায় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হোক, আরেকদল চায় আলাদা হোক। আমরা বলেছি, এটা আলাদা হওয়া উচিত। কারণ এটি জাতির স্থায়ী সংস্কার বিষয়। আমরা প্রস্তাব করেছি, নভেম্বরে গণভোট করা হোক।’

‎সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, ‘একসঙ্গে হলে কয়েকটি সমস্যা হবে। প্রতিটি দল তখন শুধুই নির্বাচনি প্রতীকের বিজয়ে মনোযোগী থাকবে। কেন্দ্র দখল হলে রিফর্মসও দখল হবে। আর যদি নির্বাচনের কোথাও স্থগিত হয়, তাহলে গণভোটও বন্ধ হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন জনপ্রতিনিধি বেছে নেওয়ার জন্য। কিন্তু গণভোট জাতির সংস্কারের জন্য। দু’টির প্রকৃতি আলাদা। আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলেছি, গণভোট আলাদা দিনে হোক। কমিশন বলেছে, সরকার সিদ্ধান্ত নিলে তারা তা বাস্তবায়ন করবে।’

‎গণভোট ও নির্বাচন আলাদা হলে খরচ বাড়বে কিনা?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গণভোট খুবই সহজ প্রক্রিয়া, বড় কোনো খরচ লাগে না। একই বাক্স, শুধু ব্যালট আলাদা হবে, অফিসারদের ভাতা ইত্যাদি সামান্য বাড়তি খরচ।’

সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ‎বলেন, ‘একদিনে ভোট হলে সংস্কারের ইস্যু ছোট হয়ে যাবে। ভোটাররা দলের প্রতীকেই ভোট দেবে, রিফর্মস ভুলে যাবে। তাই আলাদা দিনে হলে মানুষ তা গুরুত্ব দেবে, কারণ দেশের মানুষ সংস্কার চায়। আমরা মনে করি, গণভোট আগে হওয়া উচিত। অতীতে ২১ দিন, এমনকি ১০ দিন ব্যবধানেও গণভোট হয়েছে। তাই নভেম্বরে গণভোট করা সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘প্রবাসীদের ভোটের বিষয়টি, যেটা অনেক গুরুত্ব পেয়েছে। আপনারা জানেন, আমি কয়েকদিন আগে আমেরিকা জাতিসংঘের মিটিং থেকে এসেছি। সেখানে নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিদের একটি সম্মেলনে ছিলাম। সেখানে এই দাবিটা জোরালো ছিল যে, তাদের ভোটাধিকার থাকতে হবে। আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, দেশে ফিরে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করব। আজ সেই প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হলো।’

‎জামায়াতের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এই নেতা আরও বলেন, ‘দু’টি সমস্যার কথা তুলেছিলাম, একটা হচ্ছে আইডি কার্ড। এটা অবশ্যই হবে, যদিও কিছু জটিলতা আছে। তার বাইরে অন্য কোনো ডকুমেন্ট দিয়ে করা যায় কিনা। আজ নির্বাচন কমিশন বলেছে যে, জন্ম সনদের মাধ্যমেও ভোটার হওয়া সম্ভব। এতে একটা সমাধান পাওয়া যেতে পারে।

আব্দুল্লাহ মো. তাহের, ‘তাদের ভোট কার্যক্রমের ব্যাপারে বিভিন্ন দেশে কাজ শুরু হয়েছে। কোনো কোনো দেশে তিন-চারটি করে সেন্টার স্থাপন করেছে। সব মিলিয়ে একটি প্রস্তুতি তারা নিচ্ছে, যা নিয়ে আমরা আপাতত সন্তুষ্ট।’

‎রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের বিষয়ে নায়েবে আমির বলেন, ‘এটি যেন লটারির মাধ্যমে হয়, যাতে নিরপেক্ষতা বজায় থাকে। সরকার বলেছে, তারা সেইভাবে করবে। আমরা জোর দিয়েছি, যেন এটা বাস্তবায়িত হয়। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে এটি কমিশনের অধীনে চলে আসবে। আমরা অনুরোধ করেছি, তারা যেন একই পদ্ধতি অনুসরণ করেন।’

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top