আকাশ ছোঁয়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ, নাখোশ ক্রেতারা

পহেলা বৈশাখ ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামীকাল সোমবার বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন ‘পহেলা বৈশাখ’ । এরইমধ্যে নতুন বছরকে বরণ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন চট্টগ্রামের মানুষ। তাইতো ভোজনরসিক হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের মানুষদের চলছে ইলিশ-পান্তা খাওয়ার তোড়জোড়। সন্ধ্যা হতেই অফিসের ব্যাগপত্র রেখে বাজারের ব্যাগ নিয়ে ছুটলেন কেউ কেউ।

এক কেজি বা তারচেয়ে বড় ইলিশ কিনতে কয়েক বাজার ঘুরে ফেলেছেন অনেকেই । কারণ বাজারে বড় সাইজের ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। এরপর যখন কোথাও এ মাছ খুঁজে পায়, সেখানে দাম শুনে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার অবস্থা ক্রেতার। এখন এক কেজি বা এর চেয়ে কিছুটা বড় ইলিশের দাম ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৪ হাজার টাকায় উঠেছে।

পহেলা বৈশাখ এলেই বিক্রেতারা বাড়তি মুনাফা করতে নেমে পড়েন প্রতিযোগিতায়। এবারো ব্যতিক্রম নয়। ইচ্ছেমতো দাম হাঁকানো হচ্ছে ইলিশের। পরিস্থিতি এমন— যত বড় ইলিশ, দামও তত বেশি। ইলিশের আকাশ ছোঁয়া দামে বিক্রেতার সাথে বাগ-বিতন্ডাতেও জড়াচ্ছেন ক্রেতারা।

বৈশাখের আগের দিন রোববার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বন্দরনগরীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পহেলা বৈশাখে পান্তার সঙ্গে খেতে উচ্চবিত্তরা ইলিশ কিনছেন শখে। সেই ইলিশই মধ্য ও নিম্নআয়ের মানুষের পাতে উঠছে না দামের কারণে। পহেলা বৈশাখের আগে এই দুই শ্রেণির লোকজন ইলিশের দাম শুনে রীতিমতো নাখোশ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, জেলেদের জালে এখন ইলিশ খুব কম ধরা পড়ছে। এজন্য দাম আগের তুলনায় একটু বেশি। এ ছাড়া এখন জাটকা সংরক্ষণের জন্য নিদিষ্ট মাপের জাল ব্যবহার করছেন জেলেরা। সে কারণে ইলিশের দেখা মিলছে না।

অন্যদিকে ক্রেতা-ভোক্তারা ইলিশের বাড়তি দামের জন্য অসাধু চক্রের কারসাজিকে দায়ী করছেন। তাদের অভিযোগ, অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ইলিশের দাম বাড়াচ্ছে। নইলে ইলিশ মাছের এত দাম কেন হবে?

সরেজমিনের নগরীর কাজির দেউরি, ২নং গেট, বহদ্দার হাট কাঁচাবাজার ও চৌমুহনীর কর্ণফুলি কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে— সাইজ ভেদে ও বাজার ভেদে (ছোট ও মাঝারি) ইলিশের দাম পড়ছে কেজি ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা। আর বড় মাপের ইলিশ কিনতে গুনতে হচ্ছে তিন থেকে চার হাজার টাকা।

কাজির দেউরির সিডিএ কাঁচা বাজারে দীর্ঘক্ষন ধরে ইলিশ দামাদামি করছিলেন আব্দুল খালেক নামের একজন ক্রেতা। পেশায় বেসরকারী চাকরিজীবী খালেক জানান, মূলত বাচ্চাদের ইলিশের আবদার মেটাতেই বাজারে আসা।

কিন্তু দরদামে না মেলায় ক্ষোভ নিয়ে চাটগাঁ নিউজকে বলেন— ইলিশ এখন বড় লোকের খাবার, মধ্যবিত্তরা শুধু দাম শুনেই ফেরত যাবে। দেশের জাতীয় মাছ ইলিশের দাম এতো হওয়া উচিত না। ৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশের দাম চাওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকা আর এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ২ হাজার টাকা। মনে হয় না এবার পরিবার নিয়ে ইলিশ খাওয়া হবে।

বহদ্দারহাট কাঁচা বাজারে কথা হয় খোরশেদ আলম নামের অন্য এক ক্রেতার সাথে। তিনি বলেন, ইচ্ছে ছিল বড় একটা ইলিশ মাছ নিব।  তবে বিক্রেতারা যে দাম বলছেন তা দিয়ে বড় ইলিশ কেনার সার্মথ্য আমার নেই। একটু কষ্ট হলেও ২১০০ টাকা দিয়ে একটি এক কেজিওয়ালা ইলিশ মাছ নিতে পেরেছি। এবারের ইলিশ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেনির নাগালের বাইরে মনে হচ্ছে।

জানতে চাইলে কাজীর দেউড়ি বাজারের মাছ বিক্রেতা রণি জানান, এখন ইলিশের মৌসুম না। তাই সাগরে ইলিশ খুব কম ধরা পড়ছে। এরমধ্যে চাহিদা অনেক বেশি, তবে সরবরাহ কম- তাই দামও একটু চড়া। সরবরাহ কম হওয়ায় আমাদেরও একটু বেশি দামে মাছ কিনতে হচ্ছে। লোকসানেতো আর মাছ বিক্রি করা সম্ভব না।

নগরীর রাণী রাসমনী ঘাটের জেলে লিয়াকত উল্লাহ চাটগাঁ নিউজকে বলেন, সাগরে এখন ইলিশ নেই। যা আছে সবই জাটকা। তবে অল্প কিছু বড় ইলিশ পাওয়া যায়, যার দাম একটু বেশি।

এদিকে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ জানান, আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত মোট ৫৮ দিন বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। বর্তমানে ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে কম। তার ওপর অনেক ব্যবসায়ী আগেই কোল্ড স্টোরেজে ইলিশ মাছ মজুত করে রেখেছিলেন। সেগুলোই এখন বাজারে চড়া দামে বিক্রি করছে।

চাটগাঁ নিউজ/এইচএস/জেএইচ

Scroll to Top