রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি: তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, একদিকে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট, রেল লাইন বানায়, নদী ভাঙ্গন রোধ করে, শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই দেই। আর বিএনপি নির্বাচন বর্জনের নামে দেশের সম্পদ নষ্ট করে দিচ্ছে। বাসে-ট্রেনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করছে, আর মানুষ পোড়ায়। রাজনীতির নামে এভাবে মানুষ পোড়ানোর অপরাজনীতি দুনিয়ার কোথাও নাই। এগুলোকে আমি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলে অবিহিত করি। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে সবাইকে কঠোর হাতে তাদের দমন করতে হবে।
তিনি বলেন, জামায়াত ইসলামী স্লোগান দেই, ‘আল্লাহর আইন চাই, সৎ লোকের শাসন চাই’। ওরা বলে, ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবে। আজকে ফিলিস্তিনে মুসলমানদেরকে পাখি শিকার করার মতো করে হত্যা করা হচ্ছে, এ পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, তৎমধ্যে বেশিরভাগ নারী এবং শিশু। বিএনপি-জামায়াত আজ পর্যন্ত একটি শব্দ ইসরাইলের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করে নাই। কারণ একটি বড় রাষ্ট্র নাখোশ হতে পারে। তারা আজকে ইসরাঈলের দোসর ও মোনাফেক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছ। সুতরাং, এদেরকে চিনে রাখতে হবে। এরা নানা বিভ্রান্তি ছড়ায়।
শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা ইউনিয়নের গোয়ালপুরা বাজার, কোদালা বাজার, চা বাগান এলাকাসহ কয়েকটি স্থানে চট্টগ্রাম-৭ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. হাছান মাহমুদ নির্বাচনী পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এসময় কোদালা চা বাগানের শ্রমিক, গ্রামের নারীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে কথা বলেন এবং নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করেন তিনি। এরপর রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ও বোয়ালখালীর শ্রীপুর-খরন্দ্বীপ ইউনিয়নে গণসংযোগ করেন তথ্যমন্ত্রী।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে গিয়ে ফিলিস্তিনে বর্বর হত্যাকান্ডের প্র্রতিবাদ জানিয়েছে। আমি সরকারের তথ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রতিদিন এর বিরুদ্ধে কথা বলেছি। এই বিএনপি-জামায়াতের উপর আল্লাহ নারাজ হয়ে গেছে। কারণ তারা ফিলিস্তিনের এই হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলে নাই। তাদের নেতা তারেক রহমান কথা বলতে নিষেধ করেছে।
তিনি বলেন, আমরা ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার আগে বাংলাদেশ ছিল ৬০তম অর্থনীতির দেশ। সেখান থেকে আমরা ২৭টি দেশকে পেছনে ফেলে এখন পৃথিবীর ৩৩ তম অর্থনীতির দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। দেশে যদি আজকের এই উন্নয়ন অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে হয় তাহলে আমি আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। আজকে এই পরিবর্তন হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।
নিজের নির্বাচনী এলাকার মানুষের উদ্দেশ্যে নৌকা মার্কার প্রার্থী তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রতিদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে নামাজের পর মানুষের উপকারের মাধ্যমে আমার দিনের কাজ শুরু হয়। আমি কোন মানুষের অপকার করি নাই, কারো অপকার করা আমার ধর্ম নয়। আপনারা জানেন রাঙ্গুনিয়ার কোন একটা পাগল ও ভিক্ষুক যদি আমার গাড়ির সামনে হাত দেখায়, আমার গাড়ি দাঁড়ায়। আমি থামিয়ে কথা বলি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে মন্ত্রিসভায় সিনিয়র পজিশনে বসিয়েছেন, দলের মধ্যে ও সিনিয়র পজিশনে বসিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করার চেষ্টা করেছি। আপনাদের সন্তান হিসেবে আমি চেষ্টা করেছি আপনাদের মুখ উজ্জ্বল করার। জাতীয় পর্যায়ে আমার অনেক দায়িত্ব, এরপরও একজন চেয়ারম্যান যেভাবে এলাকায় সময় দেই, আমি সেই ভাবে সময় দিই।
তিনি বলেন, কর্ণফুলী নদীসহ রাঙ্গুনিয়ার অন্যান্য নদীর ভাঙ্গন রোধে ইতিমধ্যে ৫০০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে, আরো ১’শ কোটি টাকার কাজ হবে। অনেক জেলায়ও এত উন্নয়ন কাজ হয়নি। রাঙ্গুনিয়ার ৮ হাজার ছেলে মেয়ের চাকুরি হয়েছে আমার হাত দিয়ে। চাকুরীর সুপারিশ করার সময় আমি কখনো ভাবিনি, কে কোন দল করে। আমি সব মানুষের এমপি হবার চেষ্টা করেছি।
আগামী ৭ জানুয়ারি আত্মীয়-স্বজন সবাইকে সাথে নিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট প্রদানের আহবান জানিয়ে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম-৭ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. হাছান বলেন, অনেকে বিএনপি ঘড়ানার মানুষ আছে, আমি জানি, তারাও অনেকে আমাকে ভোট দেই। রাঙ্গুনিয়ায় আগেও এমপি, মন্ত্রী ছিল। কেউ একটি মসজিদ ভবন বানিয়েছে দেখিয়ে দিতে পারবেননা। মসজিদের মধ্যে কিছু টাকা দিয়েছে বা এক-দুই টন টিআর দিয়েছে বলতে পারবে।
তিনি বলেন, আমার পারিবারিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান এনএনকে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে রাঙ্গুনিয়ায় ২৪টি নতুন মসজিদ বিল্ডিং করে দিয়েছি। রাঙ্গুনিয়ার প্রতিটি মসজিদ, মন্দির ও প্যাগোডাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ পেয়েছে। গত ১৫ বছর সবার জন্য আমার দরজা খোলা রেখেছি, পাঁচ বছর পর আমি আপনাদের দুয়ারে এসেছি, আপনারা দয়া করে আপনাদের দুয়ারটি আমার জন্য খুলে দিবেন। ৭ জানুয়ারি সবাইকে সাথে নিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন সেই প্রত্যাশা রইল।
নির্বাচনী এ প্রচারণা কার্যক্রমে আওয়ামী লীগের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।