আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ: ফটিকছড়িতে নৌকা নয়, বাজাতে হবে একতারা

হঠাৎ পাল্টে গেলো ফটিকছড়ির সমীকরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভোটের বাকি আর মাত্র নয় দিন। প্রার্থী যাচাই বাছাই, প্রতীক বরাদ্দ , আসন ভাগাভাগি ও ব্যালট পেপার ছাপানোও শেষ। প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সংসদ সদস্য প্রার্থীরা। তবে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনির নির্বাচন নিয়ে তৈরী হয়েছে ধোঁয়াশা। নৌকার বদলে এই আসনে একতারা প্রতীকের প্রার্থী বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারীকে আওয়ামী লীগ সমর্থন জানিয়েছে বলে জানা গেছে।

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে হঠাৎ নৌকা ঘাটে বেঁধে রাখতে বলেছেন আওয়ামী লীগ, বাজাতে হবে একতারা। এমন তথ্য চাটগাঁ নিউজকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান আতা।

আতাউর রহমান আতা চাটগাঁ নিউজকে বলেন, আমি গতকাল ফটিকছড়ি গিয়েছিলাম, সেখানে নৌকার প্রচারণার একটি সভায় বক্তব্যও রেখেছিলাম। তবে এর ৩ ঘন্টা পর আমাকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ফোন দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে জানান, নেত্রী ১৫ মিনিট আগে সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন একতারার পক্ষে কাজ করতে হবে। আমাকে জেনারেল সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদেরও ফোন দিয়েছিলেন।

দল থেকে লিখিত কোন নির্দেশনা আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাকে লিখিত কোন নির্দেশনা দেয়া হয় নি। তবে দলের জেনারেল সেক্রেটারি ও জয়েন সেক্রেটারি ফোন করেছেন।

এসময় শেখ আতাউর রহমান আরো বলেন, যেহেতু ব্যালট ছাপা হয়ে গেছে, গেজেট হয়ে গেছে এখন তো নৌকা তুলে ফেলার সময় নাই। তাহলে নৌকাকে বেঁধে রাখতে হবে আর একতারার পক্ষে কাজ করতে হবে। নৌকার কর্মী নেতারা দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। আমার তো বেশি কথা বলার দরকার নেই।

উল্লেখ্য চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা দুই মেয়াদে জোটের মনোনয়ন পান শরিকদল তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। তবে ভাগাভাগিতে এবার কোনো আসন পায়নি তরিকত ফেডারেশন। প্রতীক বরাদ্দের পর শতভাগ নিশ্চিত হয় সনির নৌকার টিকিট। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা পেয়ে নির্বাচনি প্রচারণাও শুরু করেন তিনি।

কিন্তু এরমধ্যে গত ২৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাত করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, ফটিকছড়ি আসনে সুপ্রিম পার্টিকে সমর্থন দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। যদিও পরদিন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া গুঞ্জনকে গুজব দাবি করে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। আর সে সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে শেখ আতাউর রহমান আতা এবং ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরি। সমাবেশের পরেই তাঁদের কাছে ফোন দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তাদের নির্দেশ- ফটিকছড়িতে নৌকা নয়, এবার বাজাতে হবে একতারা।

বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী বলেন, এ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে এখনো আলোচনা চলছে, এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত কোন সীদ্ধান্ত আসেনি। যদি নৌকা নাই থাকে, তাহলে কী ফর্মুলায় এগুবো তা মিডিয়াকে শীঘ্রই জানানো হবে।

অন্যদিকে নৌকার প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনির সাথে যোগাযোগ করার জন্য তাঁর মোবাইলে ফোন করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

ফটিকছড়িতে নৌকার প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি ছাড়াও এই আসনে বর্তমানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান এমপি তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হোসেন আবু তৈয়বসহ মোট ৭ জন প্রার্থী।

Scroll to Top