আইনি জটিলতায় চট্টগ্রাম চেম্বার, আদৌ কী হবে নির্বাচন?

নিজস্ব প্রতিবেদক :  চলছে শতবর্ষী বাণিজ্য সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র নির্বাচনী প্রস্তুতি । ১১ আগস্ট ঘোষিত তফসিলে আগামী ১ নভেম্বর নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন চেম্বারের সম্ভাব্য প্রার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ সদস্যগণ। তাদের মতে— আইনি জটিলতায়  স্থগিত হয়ে যেতে পারে বহু কাঙ্ক্ষিত এই নির্বাচন!

এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ‘চাটগাঁ নিউজে’র হাতে এসেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমীন স্বাক্ষরিত সেই চিঠি ও প্যানেল আইনজীবীর মতামত।

চিঠিতে চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচন বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্যানেল আইনজীবীর আইনগত মতামত অনুযায়ী বলা হয়েছে— ‘দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতিবৃন্দের সরাসরি নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে প্রেরণ করা হলো।

এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সাধারণ সদস্যদের মাঝে। সম্ভাব্য তারিখে ভোট গ্রহণ নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বারের সম্ভাব্য সভাপতি প্রার্থী আমজাদ হোসেন চাটগাঁ নিউজকে বলেন, তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে আগের নিয়মে। যেখানে কেবল ২৪ জন পরিচালক সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৮ সেপ্টেম্বরের একটি চিঠিতে বলা হচ্ছে সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতিরাও নির্বাচিত হবেন সরাসরি ভোটে। ফলে কিছুটা আইনি জটিলতায় পড়তে পারে চেম্বার নির্বাচন। তবে আমি যেহেতু একজন সভাপতি প্রার্থী তাই আমি চাইবো সকল জটিলতার অবসান ঘটিয়ে সরকার নির্ধারিত তারিখে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।

আরেক সভাপতি প্রার্থী নুরুল হক বলেন, যেহেতু এটি সরকারের বিষয়, তারা এ নিয়ে কাজ করবে বলে আমি মনে করি। তবে আমি যেহেতু প্রার্থী, এ বিষয়ে আর তেমন কিছু বলতে চাই না।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্যানেল আইনজীবী তৌফিক আনোয়ার চৌধুরী তাঁর মতামতে উল্লেখ করেন—‘দি চট্টগ্রাম জেলা চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ এর কার্যনির্বাহী কমিটি ২০২৫-২০২৭ নির্বাচন পরিচালনার জন্য সরকার কর্তৃক প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। প্রশাসক কর্তৃক নির্বাচন বোর্ড এবং আপীল বোর্ড গঠন করা হয়। ইতিমধ্যে দি চট্টগ্রাম চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ এর সদস্যদের উপস্থিতিতে তফসিল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ঘোষিত তফসিল অনুসারে চেম্বারের সদস্যগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের পদ্ধতি সম্পর্কে অস্পষ্টতা তৈরি হওয়ায়, চেম্বারের সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন পত্রের মাধ্যমে এই অস্পস্টতা দূরীকরণের জন্য চেয়ারম্যান, নির্বাচন বোর্ড, দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাষ্ট্রিজ অনুরোধ জানান।

তফসিল ঘোষণার পরে চেম্বারের সদস্যগণ নির্বাহী কমিটির সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি, সহ-সভাপতি সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করার দাবি উত্থাপন করেন। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে, পরিচালক স্থানীয় সরকার বিভাগ, চট্টগ্রাম এবং চেয়ারম্যান, নির্বাচন বোর্ড, দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাষ্ট্রিজ গত ৩১ আগস্ট ২০২৫ এর মাধ্যমে উক্ত চেম্বারের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি এবং পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন নাকি চেম্বারের ভোটাধিকারী সকল সদস্যদের প্রত্যক্ষ ও গোপন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন তা স্পষ্টীকরনের জন্য অনুরোধ জানান।

এই ক্ষেত্রে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা-২০২৫ গত ১৯ মে, ২০২৫ প্রবতর্নের তারিখ হইতে অবিলম্বে কার্যকর হওয়ায়, ৩৩ (১) বিধিতে উল্লেখিত ১২০দিন সময়সীমা আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে পূর্ণ হইবে। সেই অনুযায়ী বিধি ৩৩(১) অনুসারে সংগঠনটি বর্তমানে সংঘবিধিতে নির্বাচনে সরাসরি ভোটাধিকার সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে না পারলেও, ৩৩(১) শর্ত অনুসারে বিধিমালা ২০২৫ এর বিধি ১৮(২) এবং ১৯ (১) এর বিধান অর্থাৎ সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাহী কমিটির সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং সহ-সভাপতি নির্বাচন করার বিষয়টি ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখের অব্যবহিত পরে অর্থাৎ ১২০ দিনের সময়সীমা পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংগঠনটির সংঘবিধিতে অন্তর্ভুক্ত হইয়াছে বলে গন্য হবে।

তদনুযায়ী, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ইং তারিখে পরে যে কোন সময়ে নির্বাচনী তফসিল প্রকাশের মাধ্যমে অথবা তফসিলে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে চেম্বারের সদস্যগণ সরাসরি ভোট প্রয়োগে সংগঠনটির সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং সহ-সভাপতি নির্বাচিত করতে পারবেন বলে আমি আইনগত অভিমত পোষণ করি।

এইরূপে, সংগঠনটির সদস্যগণ, বিধিমালা ২০২৫ অনুসারে উপরোক্ত ৩টি কার্য-নির্বাহী পদ সরাসরি নির্বাচন করার সুযোগ পেতে পারে এবং কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যান্য সদস্যগন/পরিচালকগণ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সংঘবিধি অনুযায়ী ৪টি (চার) গ্রুপ (অর্ডিনারী, এসোসিয়েট, টাউন এসোসিয়েশন, ট্রেড গ্রুপ) সদস্যগণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে ভোট প্রয়োগ করিবেন। অর্থাৎ দি চট্টগ্রাম কর্মাস অব ইন্ড্রাস্ট্রিজ সংঘবিধি অনুসারে ৪ টি গ্রুপ অডির্নারী মেম্বার থেকে ১২ জন, এসোসিয়েট মেম্বার থেকে ৬জন, টাউন এসোসিয়েশন থেকে ৩জন, ট্রেড গ্রুপ থেকে ৩ জন সহ মোট ২৪ জন প্রতিনিধি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচন করবেন।

তবে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে চট্টগ্রাম চেম্বারের নবনিযুক্ত প্রশাসক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নূরীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী ১৪-২০ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, ২১ সেপ্টেম্বর জমা, ২৩ সেপ্টেম্বর যাচাই বাছাই করার কথা রয়েছে। যাচাই বাছাই শেষে ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশ হবে খসড়া প্রার্থী তালিকা এবং ৫ অক্টোবর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ/এসএ

Scroll to Top