আইনজীবী সমিতির কড়া বার্তা, পেশাদার না হলে ছাড়তে হবে সদস্যপদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামে এমন অনেক আইনজীবী রয়েছেন যারা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য। কিন্তু আইন পেশাতে নেই। তাদের মধ্যে কেউ সরকারি, কেউ বেসরকারি, কেউ বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত। আবার অনেকেই রয়েছেন ব্যাংকিং সেক্টর বা অন্য কোন ভিন্ন পেশায়। তবে আইনজীবী সমিতির সদস্যপদটিকে নানা সুযোগ-সুবিধা আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। সমিতির মেম্বার অথচ পেশায় নেই-এমন আইনজীবীদের জন্য এবার দুঃসংবাদ আসছে। ভিন্ন পেশায় থেকে আইনজীবীর পরিচয় ব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলকারী এসব আইনজীবীদেরকে এবার সমিতি থেকে বাদ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে এডহক কমিটি। এমন সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হিসেবে মন্তব্য করছেন অনেকে।

সোমবার (২ মার্চ) চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির এডহক কমিটির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট একেএম মকবুল কাদের চৌধুরী স্বাক্ষরিত এ জরুরি বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সংশ্লিষ্ট মহলে নানামুখী আলোচনা চলছে।

সমিতির পক্ষ থেকে জারিকৃত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, “চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির যেসকল সদস্য সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা, অর্থ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি মালিকাধীন প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণকালীন বা খন্ডকালীন চাকরিতে নিয়োজিত থেকে সমিতির সদস্যপদ বহাল রেখেছেন। তাদেরকে আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে সদস্য স্থগিতকরণের জন্য নির্ধারিত ফরমে আবেদনের অনুরোধ করা যাচ্ছে। উক্ত সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর তাদেরকে সমিতি গঠনতন্ত্রের বিধি মোতাবেক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সমিতির মধ্যে প্রায় ৮ হাজারের মত সদস্য রয়েছেন। এদের মধ্যে অনেক সদস্যই পেশাগত ভাবে আইন পেশায় জড়িত নন। তারা বিভিন্ন সেক্টরে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন। অথচ আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ অর্জনের প্রধান শর্তই ছিল আইন পেশায় থাকতে হবে। সমিতির নাম ব্যবহারকারী এমন আইনজীবীদের কারণে পেশাজীবী আইনজ্ঞরাও বিব্রত। তাই পেশার স্বার্থে, পেশাজীবীদের সাংগঠনিক সুনাম অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে সমিতির পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির এডহক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট একেএম মকবুল কাদের চৌধুরী চাটগাঁ নিউজকে বলেন, সমিতির গঠনতন্ত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, সমিতির সদস্যদেরকে বাধ্যতামূলক আইন পেশায় থাকতে হবে। তা নাহলে মেম্বার হিসেবে থাকতে পারবে না। সমিতির অনেক সদস্যই বর্তমানে ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। তাদের উচিত স্বেচ্ছায় সমিতি থেকে সদস্যপদ স্থগিত করা। তা না হলে সমিতি ব্যবস্থা নেবে। তারা কেনই বা সমিতির সদস্য হিসেবে থাকবেন। মেম্বারশিপকে কাজে লাগিয়ে বেনিফিটেড হন তারা। নানা সুযোগ সুবিধা আদায় করেন। এমন ব্যবস্থা চলতে দেয়া যায় না। তাই তাদেরকে সমিতির কাছ থেকে সদস্যপদ স্থগিতকরণের জন্য নির্ধারিত ফরমে আবেদন করার অনুরোধ করা হচ্ছে। নয়তো নির্ধারিত তারিখের পর সমিতির পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির মেয়াদ সম্পন্ন হওয়া সাপেক্ষে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এমন অবস্থায় ১০ ফেব্রুয়ারি আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। নির্বাচন পরিচালনার জন্য কমিশনও গঠন করা হয়। তবে নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে পারস্পরিক কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি, হুমকি, নির্বাচনে আওয়ামীপন্থীদের সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি, আবার বিএনপিপন্থীরা আওয়ামী লীগপন্থীদের মনোনয়ন বাতিলের দাবিসহ নানা কারণে গত ৪ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন নির্বাচন কমিশন। আইনজীবী সমিতির ১৩২ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এ নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়।

এরপর অ্যাডভোকেট একেএম মকবুল কাদের চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত এডহক কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- অ্যাডভোকেট রফিক আহমেদ, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শামসুল আলম, অ্যাডভোকেট সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জহুরুল আলম।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ

Scroll to Top