সিপ্লাস ডেস্ক: চট্টগ্রামে অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক বাপ্পী হত্যা মামলার প্রধান আসামি রাশেদা বেগমকে (৩৩) গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
সোমবার (৩১ জুলাই) দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় র্যাব-৭। এর আগে রোববার (৩০ জুলাই) চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া থানার সৈয়দ শাহ্ রোড এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার রাশেদা বেগম কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানা এলাকার জাকির হোসেনের মেয়ে এবং ভিকটিম আইনজীবীর স্ত্রী।
এর আগে গত ২৬ জুলাই চট্টগ্রাম তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. জসিম উদ্দিন আইনজীবী হত্যা মামলায় রাশেদা বেগমসহ হুমায়ুন রশিদ নামের আরেকজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। রায়ে তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
একই রায়ে মামলার আরও তিন আসামি আল আমিন (৩৪), আকবর হোসেন ওরফে রুবেল ওরফে সাদ্দাম (২৯) ও মো. পারভেজ ওরফে আলীকে (২৯) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অন্যদিকে, জাকির হোসেন ওরফে মোল্লা জাকির (৩৫) নামে আরেক আসামিকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। নিহত বাপ্পী পার্বত্য জেলা বান্দরবানের আলীকদম থানার চৌমুহনি এলাকার আলী আহমেদের ছেলে।
রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হুমায়ুন রশিদ, যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত মো. পারভেজ এবং খালাস পাওয়া জাকির হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে সাজা পরোয়ানামূলে কারাগারে পাঠানো হয়। রাশেদাসহ দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য তিন আসামি পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর নগরীর চকবাজার থানার কে বি আমান আলী রোডের একটি ভবনের নিচতলার বাসা থেকে বাপ্পীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় মরদেহের হাত-পা ও মুখ টেপ দিয়ে মোড়ানো ছিল। পাশাপাশি স্পর্শকাতর অঙ্গ কাটা অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ঘটনায় বাপ্পীর বাবা আলী আহমেদ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
সূত্রে জানা যায়, ওমর ফারুক বাপ্পী ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে বাপ্পী ছিলেন সবার বড়। হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার আগ পর্যন্ত পরিবারের লোকজন জানতেন বাপ্পী অবিবাহিত। এদিকে মামলার দুইদিন পর ২৭ নভেম্বর কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে রাশেদা বেগমসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে জামিনে গিয়ে পলাতক হন রাশেদাসহ অন্যরা।
মামলার তদন্তে বেরিয়ে আসে, দেলোয়ার নামে এক ইয়াবা পাচারকারীর স্ত্রী ছিলেন গ্রেফতার রাশেদা বেগম। স্বামীর মামলার সূত্র ধরে আইনজীবী বাপ্পীর সঙ্গে পরিচয়। এরপর তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। একপর্যায়ে তারা গোপনে বিয়ে করেন। মূলত কাবিনের টাকা নিয়ে জটিলতার কারণে রাশেদা বেগমই বন্ধু হুমায়ুনের মাধ্যমে ভাড়া করা যুবকদের দিয়ে বাপ্পীকে হত্যা করেন।
২০১৮ সালে ৫ এপ্রিল ছয় আসামির বিরুদ্ধে আদালতকে অভিযোগপত্র দেয় পিবিআই। এরপর ২০২০ সালে ১৫ অক্টোবর মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। মামলার বিচারকার্য চলাকালীন সময়ে অভিযোগপত্রের ৩২ সাক্ষীর মধ্যে আদালত ২৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।